ফরিদপুরে দুর্ঘটনা

ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন—কিছুই ছিল না ইউনিক পরিবহনের সেই বাসটির

পণ্য পরিবহনের পিকআপটিও বিধি লঙ্ঘন করে যাত্রী পরিবহন করছিল।
ফরিদপুরে দুর্ঘটনা
ছবি: ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সৌজন্যে

ফরিদপুরে ইউনিক পরিবহনের যে বাসের সঙ্গে পিকআপের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হন, সেই বাসটি ফিটনেস ছাড়পত্র ও ট্যাক্স টোকেন ছাড়াই তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলাচল করছে।

এমনকি যেই ঢাকা-মাগুরা রুটে দুর্ঘটনাটি হয়, সেই রুটে বাসটি (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-১৭৫৯) চলাচলের অনুমোদনও ছিল না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বাসটির চট্টগ্রাম-বগুড়া রুটে চালানোর অনুমোদন থাকলেও ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে তা আর হালনাগাদ করা হয়নি।

কিন্তু সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর বেশ কয়েকটি ধারা লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই দূরপাল্লার এই বাসটি চলাচল করেছে।

অন্যদিকে যে পিকআপের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়, পণ্য পরিবহনের সেই পিকআপটিও বিধি লঙ্ঘন করে যাত্রী পরিবহন করছিল।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর এলাকায় ঘটা এই দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আরও অনেকে আহতও হয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, হতাহতরা সবাই পিকআপের (যশোর-ন ১১-১৩৩৯) যাত্রী ছিলেন।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, বাসটি সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বার্ষিক ফিটনেস ছাড়পত্র নেয় এবং ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ফিটনেস ছাড়পত্র ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, বাসটি সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ করে, যার মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে।

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৭৬ ধারা অনুযায়ী, মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাক্স টোকেন নিয়ে গাড়ি চালালে কোনো ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

বাসটি চট্টগ্রাম-বগুড়া রুটে চলাচলের অনুমতি পেয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রুট পারমিটের মেয়াদও শেষ হয়ে যায় বলে সূত্র জানিয়েছে।

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৭৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি রুট পারমিট ছাড়া গাড়ি চালালে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বাসটির মালিক কে

বিআরটিএর নথি অনুযায়ী, ইউনিক পরিবহনের সেই বাসটির মালিক ঢাকার তেজগাঁও এলাকার ইসহাক মিয়ার ছেলে শামসুল হুদা।

শামসুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তিনি নাজমুল হোসেন নামে একজনের কাছে বাসটি বিক্রি করেছেন।

কিন্তু বাসটি শামসুল হুদার কোম্পানি 'ইউনিক পরিবহনের' ব্যানার ব্যবহার করছিল।

নতুন মালিক তার প্রতিষ্ঠানের ব্যানার ব্যবহার করতে পারবেন কি না, জানতে চাইলে শামসুল হক বলেন, 'তারা এটা ব্যবহার করতে পারবে না। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে, অনেক বাস এই পদ্ধতি অবলম্বন করে।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে শামসুল হুদা জানান, তিনি বাসটির নতুন মালিককে 'বিক্রয় রশিদ' দিয়েছেন। কিন্তু নতুন মালিক কেন বিআরটিএতে গিয়ে মালিকানা দলিল পরিবর্তন করেননি, তা তিনি জানেন না।

বাসটির নতুন মালিক নাজমুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি ডেইলি স্টার।

বিষয়টি নিয়ে করিমপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, বাসটির রুট পারমিট বা ফিটনেস ক্লিয়ারেন্স না থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই।

টেলিফোনে তিনি বলেন, 'আমরা বিষয়টি তদন্ত করব এবং তখন সবকিছু প্রকাশ করা হবে।'

'তবে এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি বাসটির বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচটি মামলা হয়েছে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Singapore’s Financial Intelligence Unit seeks information on S Alam Group

The overseas assets of S Alam Group, including those in Singapore, came under scrutiny following recent media reports.

49m ago