লালমনিরহাটে চা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক

লালমনিরহাট চা চাষি
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার নবীনগর গ্রামের চা-চাষিরা প্রায় দেড় শ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড়ে চা-পাতা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাটে ১১৬ চাষি চা চাষ করে এখন পুঁজি তুলতে পারছেন না। এখন তারা চা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। নতুন চাষিরাও অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন না।

চাষিদের কেউ কেউ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চা গাছ কেটে তারা আবার ভুট্টা ও অন্যান্য ফসল চাষে ফিরে যাবেন।

তারা আরও জানান, লালমনিরহাট থেকে কাঁচা চা পাতা প্রায় ১৫০-১৬০ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড়ে বিক্রি করতে হয়। এতে প্রতি কেজি পাতা পরিবহনে বাড়তি খরচ হচ্ছে ৩ টাকা।

তাদের মতে, দীর্ঘ সময় পরিবহনের ফলে পাতার গুণগতমান 'নষ্ট' হওয়ায় লালমনিরহাটের চাষিরা চা কোম্পানির কাছে ১৪ টাকার পরিবর্তে ১১ টাকা কেজি দরে তা বিক্রি করছেন। পঞ্চগড়ের চা চাষিরা প্রতি কেজি চা পাতা বিক্রি করে পাচ্ছেন ১৪ টাকা।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের চাষি নুর শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ চা বোর্ডের অনুপ্রেরণা-সহযোগিতায় ৫ বছর আগে এক একর জমিতে চা চাষ শুরু করি। গত বছর প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা ২২-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম। এতে লাভ হয়েছিল।'

লালমনিরহাট চা চাষি
লালমনিরহাটে হাতিবান্ধা উপজেলার বিসনদাই গ্রামে কৃষক দম্পতি। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

'চলতি বছর প্রতি কেজি চা পাতা ২০-২৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিয়ে ১১ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে পুঁজি তুলতে পারছি না,' যোগ করেন তিনি।

'আমাদের এখানে চা পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান নেই। সে কারণে প্রায় ১৫০-১৬০ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড় জেলায় চা পাতা নিয়ে বিক্রি করতে হয়। প্রতি কেজি চা পাতা পরিবহনে বাড়তি খরচ হচ্ছে ৩ টাকা।'

'অনেক দূর থেকে চা পাতা পরিবহন করায় গুণগতমান নষ্ট হয়। আমাদের উৎপাদিত চা পাতা ২০-২৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে বিক্রি করতে হয়। প্রতি কেজি চা পাতা বাগান থেকে তুলতে শ্রমিক খরচে হয় ৪ টাকা।'

'ডিসকাউন্ট, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে আমরা প্রতি কেজি চা পাতা বিক্রি করে পাচ্ছি ৪ টাকা। ডিজেল তেল, সার, কীটনাশকের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি চা পাতা উৎপাদনে খরচ হয় ৪-৬ টাকা। চা চাষে আমরা পুঁজি তুলতে পারছি না।'

'সিদ্ধান্ত নিয়েছি চা গাছ কেটে জমিতে আবার ভুট্টা চাষ করবো। ভুট্টা লাভজনক ফসল,' যোগ করেন তিনি।

পাটগ্রাম উপজেলার নবীনগর গ্রামের চাষি তৈয়েবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে যদি চা পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান থাকতো তাহলে পাতা পরিবহন খরচ হতো না। পাতার গুণগতমানও নষ্ট হতো না। ডিসকাউন্টে তা বিক্রি করতে হতো না।'

'পরিবহন খরচ ও ডিসকাউন্টের কারণে প্রতি কেজি চা পাতায় ৬ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। প্রতি কেজি চা পাতা ২০-২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারলে আশানুরূপ লাভ হতো।'

তিনি আরও বলেন, 'বাজারদর এ রকম থাকলে আমি ২ একর জমির চা গাছ কেটে ভুট্টা ও অন্য ফসল চাষ করবো।'

পাটগ্রাম উপজেলার কিসামত নিজজমা গ্রামের চাষি বীর মুক্তিযোদ্ধা কফুর উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বড় স্বপ্ন নিয়ে ৩ একর জমিতে চা চাষ শুরু করি। গত বছর চা পাতা বিক্রি করে প্রত্যাশিত মূল্য পেলেও এ বছর পুঁজি তুলতে পারছি না। এখন চা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি। আমার অবস্থা দেখে গ্রামের কৃষকরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।'

বাংলাদেশ চা বোর্ডের লালমনিরহাট আঞ্চলিক অফিস সূত্র জানায়, লালমনিরহাটে ১১৬ চাষি ২১০ একর জমিতে চা চাষ করছেন। গত বছর এ জেলায় ৬ লাখ ৫০ হাজার কেজি কাঁচা পাতা উৎপন্ন হয়েছিল। চলতি বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার কেজি। গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ কেজি পাতা বিক্রি হয়েছে।

লালমনিরহাট চা বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক আরিফ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবহন খরচ ও ডিসকাউন্টে কাঁচা চা পাতা বিক্রি করায় লালমনিরহাটের চা চাষিরা আশানুরূপ লাভবান হতে পারছেন না। প্রায় ১৫০-১৬০ কিলোমিটার চা পাতা পরিবহন করায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। পাতার গুণগতমান ঠিক থাকে না। এ কারণে ২০-২৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে এসব পাতা বিক্রি করতে হয়।'

'লালমনিরহাটে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চা পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
election before ramadan 2026 in Bangladesh

Election could be in February, Yunus indicates

He said it will be possible if preparations completed, sufficient progress made in reforms and judicial matters

7h ago