ক্রমবর্ধমান চাহিদা সত্ত্বেও ধানের উৎপাদন কমছে

ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের সংখ্যা না বাড়ার পাশাপাশি আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে আসা এবং ভিন্ন কাজে কৃষিজমির ব্যবহার বাড়ার কারণে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি কমে আসছে।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি জমিতে ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষক। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের সংখ্যা না বাড়ার পাশাপাশি আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে আসা এবং ভিন্ন কাজে কৃষিজমির ব্যবহার বাড়ার কারণে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি কমে আসছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, দেশে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ৫ বছরে গড়ে ধানের আবাদি জমির পরিমাণ কমে ১ কোটি ১৩ লাখ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। তার আগের ৫ বছরে এর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৪ লাখ হেক্টর।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাবুদ্দিন বলছেন, ২০১০-১১ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মধ্যে তা শূন্য দশমিক ১১ শতাংশে নেমে এসেছে।

ধানের গড় উৎপাদন কমে আসার ঘটনাটি এমন একটি সময়ে ঘটছে, যখন চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে আসছে এবং প্রতি বছর বিদ্যমান জনসংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ২০ লাখ নতুন মুখ। এই বাড়তি জনসংখ্যার জন্য বছরে অতিরিক্ত ৩ লাখ টন ধানের দরকার হয়।

এর পাশাপাশি জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে এবং চাষের জন্য পানির যোগানও কমছে। সেইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতি কৃষিকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ উল্লেখযোগ্য হারে সম্প্রসারিত হয়েছিল।

গত মার্চ মাসে প্রকাশিত 'বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা' শীর্ষক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সালে সবুজ বিপ্লবের অংশ হিসেবে প্রবর্তিত ধানের উন্নত জাতগুলো ধান আবাদের জন্য ব্যবহৃত মোট জমির ১৫ শতাংশ জুড়ে ছিল। বইটির একজন সহলেখক হচ্ছেন কাজী শাহাবুদ্দিন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২০-২১ সাল নাগাদ উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড ধান চাষ ৯০ শতাংশ জমিতে সম্প্রসারিত হয়েছে।

তবে কাজী শাহাবুদ্দিনের ধারণা, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ কম। তিনি বলেন, 'সবুজ বিপ্লবের প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে। এখন আমাদের উৎপাদন বাড়ানো দরকার।'

তার মতে, গবেষণা মাঠে আদর্শ পরিবেশে ধানের যে পরিমাণ ফলন আসে, তার সঙ্গে কৃষক জমিতে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন করেন- এর মধ্যকার ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারলে মোট উৎপাদন বাড়তে পারে। তার ভাষ্য, 'এমনকি আমরা যদি হেক্টর প্রতি ১ টন উৎপাদনও বাড়াতে পারি, তাহলে মোট উৎপাদন কয়েক মিলিয়ন টন বাড়বে।'

যদিও ক্রমবর্ধমান আয় ও পরিবর্তিত জীবনধারার কারণে মাথাপিছু ধান গ্রহণের পরিমাণ কমবে, তবুও জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে ধারা তাতে অতিরিক্ত শস্যের চাহিদা তৈরি হবে।

'রাইস ভিশন ফর বাংলাদেশ: ২০৫০ অ্যান্ড বিয়ন্ড'- এ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে চাহিদার প্রায় ২০ লাখ টন ধান বাড়তি উৎপাদন হয়েছিল।

অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির এটাও জানা আছে যে, আগামী দশকগুলোতে এমন উদ্বৃত্ত বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

এর কারণ হলো, ২০৫০ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা হবে ২১ কোটি ১৫ লাখ। তখন এই বাড়তি জনগোষ্ঠীকে খাওয়াতে ৪ কোটি টনের বেশি ধান দরকার হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলও (বিএআরসি) এক গবেষণায় ২০৫০ সালে ৪ কোটি টনের বেশি ধানের চাহিদার কথা জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৩৬ লাখ টন ধানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

উৎপাদন কমে আসার কারণ হিসেবে ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউটের রাইস ভিশন- এ সম্পদ কমে আসার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

(সংক্ষেপিত, পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই Rice production growth slows despite rising demand লিংকে ক্লিক করুন)

Comments