আগাম ফুলকপি চাষে কৃষকের মুখে হাসি

এ বছর আগাম ফুলকপি চাষ করে আশানুরূপ লাভবান হওয়ায় খুশি হয়েছেন রংপুর অঞ্চলের চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম ফুলকপি চাষে ফলনও পাচ্ছেন ভালো। তবে গেল বছরের তুলনায় খরচ বেড়েছে ফুলকপি চাষে।
মাঠ থেকে ফুলকপি তুলছেন এক কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

এ বছর আগাম ফুলকপি চাষ করে আশানুরূপ লাভবান হওয়ায় খুশি হয়েছেন রংপুর অঞ্চলের চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম ফুলকপি চাষে ফলনও পাচ্ছেন ভালো। তবে গেল বছরের তুলনায় খরচ বেড়েছে ফুলকপি চাষে।

স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতি কেজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা। সবজি বিক্রেতারা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ফুলকপি কিনছেন ৫৫-৬০ টাকা। প্রতি কেজি ফুলকপি উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ১৮-২০ টাকা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খোচাবাড়ী গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ১ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ৪ হাজার ফুলকপি চারা রোপণ করেন। আবহাওয়া ভালো হওয়ায় প্রতিটি গাছে ফলন এসেছে। আগাম জাতের প্রতিটি ফুলকপি ৩০০-৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি ফুলকপি উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১৯ টাকা।

তিনি বলেন, 'আমি প্রায় ৭০০টি ফুলকপি ৬০টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। আমি আশা করছি খরচের ৩৬ হাজার তুলে ৬৫-৭০ হাজার টাকা আয় করবো।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কর্ণপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ২ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি চাষে ৭৫ হাজার খরচ করেছেন। ইতোমধ্যে এক লাখ ২০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছেন তিনি। আশা করছেন আরও অবশিষ্ট ফুলকপি বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা পাবেন।

তিনি বলেন, 'এ বছর বাজারে আগাম জাতের ফুলকপির চাহিদা ব্যাপক। সবজি বিক্রেতারা সরাসরি খেত থেকে আশানুরূপ দামে ফুলকপি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। গেল বছর ২ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি চাষে খরচ করেছিলাম ৫৫ হাজার টাকা। ফুলকপি বিক্রি করেছিলাম এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। গেল বছর ফলন একটু কম হয়েছিল।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যেরবাজার এলাকার চাষি রমেশ চন্দ্র বর্মণ ডেইলি স্টারকে বলেন, গেল বছর ৬ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করলেও এ বছর করেছেন ৩ বিঘা জমিতে। গেল বছরের তুলনায় এ বছর আগাম জাতের ফুলকপি চাষে খরচ বেশি হচ্ছে। তবে ফলন ও বাজার মূল্য আশানুরূপ থাকায় গেল বছরের তুলনায় বেশি লাভ হচ্ছে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমরা আগাম জাতের ফুলকপি আশানুরূপ দামে বিক্রি করতে পারবো। এরপর থেকে ফুলকপির সরবরাহ বাড়বে এবং বাজারদর কমে যাবে।

লালমনিরহাট শহরে নবাবেরহাটে আসা সবজি ক্রেতা নুর ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, গেল বছরের তুলনায় সবজির মূল্য অনেক বেশি। গেল বছর এই সময়ে ফুলকপি কিনেছিলেন ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু, এ বছর তা কিনতে হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা দরে। অন্যান্য সবজির মূল্যও বেশি। সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় সবজির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন তিনি।

কুড়িগ্রাম শহরে কাঁচাবাজারে সবজি পাইকার শিবেন চন্দ্র দাস ডেইলি স্টারকে জানান, তারা কৃষকদের খেত থেকে সরাসরি ফুলকপি কিনছেন। স্থানীয় খুচরা পাইকারের মাঝে এসব সবজি বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা এখান থেকে ফুলকপি ট্রাকযোগে রাজধানী ঢাকাসহ দশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছি। তবে গেল বছরের তুলনায় এবছর আগাম জাতের ফুলকপির সরবরাহ একটু কম।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও রংপুরে এ বছর আগাম জাতের ফুলকপি চাষ হয়েছে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। গেল বছর ছিল ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া প্রতিকূল হতে পারে এই আশঙ্কা আর সবজি উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক এবছর আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করেননি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় কৃষকরা আগাম জাতের ফুলকপির আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন। ফুলকপির বাজারদর গেল বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় কৃষকরা ফুলকপি চাষে আশানুরূপ লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের ফুলকপিসহ নানা ধরনের সবজি চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়। বিপুল সংখ্যক কৃষক সবজি উৎপাদন করে নিজেদের অনেক উন্নতি করছেন।'

Comments