আগাছা ও ঝোপঝাড়ে হারিয়ে গেছে দেশের প্রথম বাঁশ উদ্যান

বিপন্ন প্রজাতির বাঁশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ২০১২ সালে বাঁশ উদ্যান সৃজনের উদ্যোগ নিয়েছিল বন অধিদপ্তর।
ওই বছরের ৬ জুন সিলেটের শহরতলীর ফরেস্ট স্কুল এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ভেতরে ২৩ প্রজাতির বাঁশের চারা রোপণের মাধ্যমে দেশের প্রথম বাঁশ উদ্যানের যাত্রা শুরু হয়। 'ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন অ্যান্ড ইকো-ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট' এর অধীনে ফরেস্ট স্কুল এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ভেতরে ১ দশমিক ৪১৭ হেক্টর জায়গা এই উদ্যানের জন্য নির্ধারণ করা হয়।
এরপর মাত্র ৯ বছরে বাঁশ উদ্যানটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। উদ্যানে মাত্র কয়েকটি প্রজাতির বাঁশ টিকে আছে। পুরো উদ্যান ছেয়ে গেছে গেছে আগাছা ও ঝোপঝাড়ে।
বন অধিদপ্তর বাঁশ উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৭০০টি বাঁশের চারা রোপণ করেছিল। এর মধ্যে ছিল কলসী, পেঁচা, রুপাহি, টেঙ্গা, জাই, মুলি, থাই বরুয়া, কাটা বরুয়া, পলি মরকা, কঞ্চি, বুদুম, কালী, সোনালি, ডলু, মাকাল, মৃতিঙ্গা, তেতুয়া, ওড়া, বেতুয়া, পরুয়া, বোতম, রঙ্গন ও পারুয়া জাতের বাঁশ।

বাঁশের চারা রোপণের পর উদ্যানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বন অধিদপ্তরের তৎকালীন প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী।
সম্প্রতি এ বাঁশ উদ্যান সরেজমিনে গিয়ে কয়েকটি প্রজাতির বাঁশের ঝাড় দেখা যায়। উদ্যানের বড় একটি অংশ ঘাস ও ঝোপজাতীয় গাছে ঢেকে গেছে।
এ সময় একজন বনরক্ষীকে বাঁশ ঝাড় থেকে কয়েকটি বাঁশ কেটে নিতে দেখা যায়। তিনি জানান, বাগানে বেড়া দেওয়ার প্রয়োজনেই তিনি বাঁশগুলো কেটেছেন।
আলাপকালে অন্য একজন বনরক্ষী জানান যে বাঁশ উদ্যান সৃজনের এক-দুই বছরের মধ্যেই প্রায় সব বাঁশের প্রজাতি বিনষ্ট হয়ে যায়।
অতিবৃষ্টি, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং বাঁশ কেটে নিয়ে যাওয়ার কারণেই বাঁশ উদ্যান ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, 'বন অধিদপ্তর প্রায়ই এরকম প্রকল্প প্রস্তুত করে যার মূল উদ্দেশ্য থাকে বাজেট বরাদ্দের টাকা খরচ করা। এতে বন সংরক্ষণ নয় বরং মুষ্ঠিমেয় মানুষ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন।'
তিনি বলেন, 'দেশের প্রথম বাঁশ উদ্যানের এ উদ্যোগটি হতে পারতো বিপন্ন বাঁশের প্রজাতি সংরক্ষণে অধিদপ্তরের অন্যতম একটি উদ্যোগ। কিন্তু তাদের অবহেলা উদ্যানটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।'
এ ব্যাপারে বন অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান বাঁশ উদ্যানের প্রকল্পের বিষয়ে তিনি অবগত নন। পরদিন তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করে জানান যে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছেন।
তিনি বলেন, 'যেটুকু তথ্য আমি জোগাড় করেছি, তাতে এটা নিশ্চিত হয়েছি যে উদ্যানটি বেশ কয়েকবছর আগেই প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি শিগগির উদ্যান পরিদর্শন করে আবার যথাযথভাবে উদ্যোগ নিয়ে বাঁশ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।'
Comments