সূর্যমুখীর হাসি

সূর্যমুখীর বাগান
ফরিদপুরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে সূর্যমুখীর বাগান। ছবি: সংগৃহীত

দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারো সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার।

দিনভর এই সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছেন কয়েক শ মানুষ। দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগান নানান বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সূর্যমুখী ফুলের এ বাগানটি এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের কাছে দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আসছেন, কেউ বা আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। সুখস্মৃতি ধরে রাখতে নানা ভঙ্গিতে মুঠোফোন কিংবা ক্যামেরায় ছবি তুলছেন তারা।

মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্যটির দেখা মেলে ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বদরপুর এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে। এখানে ৩ একর জায়গাজুড়ে গত নভেম্বরের ৫-৬ তারিখে বপন করা হয়েছে বারি সূর্যমুখী-২ জাতের কয়েক হাজার সূর্যমুখী ফুলের বীজ। প্রায় প্রতিটি গাছে ফুল ফুটেছে।

সূর্যমুখীর বাগান
বিএডিসির সূর্যমুখী বাগান পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

দর্শনার্থীদের ভিড়ে বাগানটির রক্ষণাবেক্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কেউ যেন বাগানের ভেতর ঢুকে বা পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গিয়ে বাগান নষ্ট না করেন এবং ফুলে হাত না দেন—এজন্য সার্বক্ষণিক হাতে হাত মাইক নিয়ে, আবার কখনো হুইসেল বাজিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।

বাগানের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছেন ২ মালি। তাদের একজন আসাদ মোল্লা (৫৮) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিদিন কয়েক শ মানুষ এ ফুলের বাগান দেখতে, ছবি তুলতে আসেন। শুক্রবার-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ ভিড় বাড়ে। কেউ যাতে ফুলে হাত না দেন বা বাগানের ক্ষতি না করেন আমরা তা দেখাশোনা করি। কেউ খেতের ভেতর যেতে চাইলে হ্যান্ড মাইক দিয়ে নিষেধ করা হয়।'

বিএডিসি কর্তৃপক্ষ ডেইলি স্টারকে জানায়, কয়েক বছর আগে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু হয়। বর্তমানে বিশাল এলাকাজুড়ে সূর্যমুখীর বাগান করা হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে সূর্যমুখী বাগানে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। সব বয়সী দর্শনার্থীরা এখানে ঘোরাঘুরি করছেন, ছবি তুলছেন। কেউ কেউ বাধা উপেক্ষা করে বাগানে নেমে যাচ্ছেন।

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের হিসাববিদ্যা বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মানিক কুণ্ডু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফরিদপুরে বিনোদনের জায়গা খুব কম। একটু দাঁড়িয়ে শ্বাস নেওয়ার জায়গা নেই। এ বাগানে এসে চোখ জুড়ানোর পাশাপাশি মনও ভরে যায়।'

সূর্যমুখীর বাগান
বিএডিসির বাগানে সূর্যমুখীর হাসি। ছবি: সংগৃহীত

শহরের হেলিপোর্ট বাজারের বাসিন্দা সেতু ঘোষ (৩৪) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিবছর এই সময়টাতে সূর্যমুখী বাগান ছোটখাটো পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়। গত বছর কয়েকবার এখানে ঘুরতে এসেছিলাম। এ বছরও ২-৩ বার আসা হয়ে গেছে। এখানে বিকেলে ঘুরতে আসলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও শহরের কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে বুকভরে শ্বাস নেওয়া যায়।'

বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন কয়েক হাজার দর্শনার্থী ফুল দেখতে এখানে ভিড় করেন। শুক্র ও শনিবারে তাদের সংখ্যা বেড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার হয়। গত ১৫ বছর ধরে এখানে সূর্যমুখীর চাষ হলেও গত ৫-৬ বছর ধরে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।

বিএডিসি বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের উপসহকারী পরিচালক মো. রাশেদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বেড়ে গেছে। প্রতি একর জমিতে ৮০০ কেজি বীজ উৎপন্ন হয়। এক একর জমি চাল করতে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক একর জমি থেকে পাওয়া বীজ দিয়ে যে তেল উৎপন্ন হয় তা ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এটি লাভজনক হওয়ায় কৃষক সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন।'

'এক মন বীজ থেকে ১৮ থেকে ২০ কেজি তেল উৎপন্ন হয়,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'প্রতি কেজি তেল বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে।'

তার মতে, সূর্যমুখীর তেল কলেস্টরল মুক্ত ও শরীরের জন্য উপকারী বলে এর চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে।

তিনি জানান, সরকার তেল উৎপাদনে জোর দিয়েছে। চলতি বছর সরিষা ও সূর্যমুখী চাষ বেড়েছে। ফরিদপুরে বিএএডিসির কৃষকরা ১০ একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। এর বাইরেও অনেক কৃষক সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। চলতি বছর ফরিদপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ২৮৪ একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Elections entirely Bangladesh's internal matter: Shafiqul

'Wounds caused by crimes against humanity perpetrated by AL still fresh,' says CA's press secretary

20m ago