বালুচরে সূর্যমুখীর হাসি

প্রায় পাঁচ লাখ কেজি তেলবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চর কোদালকাটি এলাকায় সূর্যমুখী চাষ। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় ২২৯ হেক্টর জমিতে এবার সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ কেজি তেলবীজ উৎপাদনের।

এ বছর ৭০ শতাংশ সূর্যমুখী চাষ হয়েছে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীসহ ২৬টি নদীর ৬০টি চরে। চরাঞ্চলগুলো সূর্যমুখীর হাসিতে ভরে গেছে। মার্চ মাসের মধ্যে সূর্যমুখী বীজ ঘরে তুলবেন কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর রংপুর অঞ্চলে ২২৯ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন ৬২০ জন কৃষক। গেল বছর সূর্যমুখী চাষ হয়েছিল ১৯৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টর জমি থেকে সূর্যমুখীর বীজ উৎপন্ন হয় ২১০০-২৪০০ কেজি। এতে খরচ হয় ৬৫-৭০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজ বিক্রি হয় ১০০-১১০ টাকা দরে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে সূর্যমুখী বীজ বপন করতে হয়। ১০০-১১০ দিনে সূর্যমুখী বীজ ঘরে তুলতে পারেন কৃষক। এ বছর চরাঞ্চলে প্রায় ৭০ শতাংশ সূর্যমুখী চাষ হয়েছে।

বালুচরে সূর্যমুখীর চাষ করে এবার মুনাফার আশা করছেন কৃষকেরা। ছবি: স্টার

সূর্যমুখী চাষিরা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সূর্যমুখী চাষ লাভজনক। কিন্তু উৎপাদিত সূর্যমুখী বীজ বিক্রি করতে বাজার ব্যবস্থা নিয়ে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। উৎপাদিত অন্য ফসলের মতো সহজে সূর্যমুখী  বীজ বাজারে বিক্রি করতে পারেন না। বাজার ব্যবস্থা সহজ হলে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবেন। গেল বছর প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজ ৯৫-১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন।

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চর কোদালকাটি এলাকার কৃষক আমিনুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি এ বছর এক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ৮৫০-৯০০ কেজি তেলবীজ উৎপাদনের আশা করছেন। সূর্যমুখী চাষে তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা।

'আমি এ বছর বাজার ব্যবস্থা ভালো পেলে আগামী বছর আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী চাষ করব। বালুচরে আমার সূর্যমুখী চাষ দেখে অনেক কৃষক আগ্রহী হয়েছে।'

একই চরের কৃষক এরশাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কৃষি বিভাগের প্রণোদনা পেয়ে তিনি সূর্যমুখী চাষ করেছেন এক একর জমিতে। আশানুরূপ ফলনের আশা করছেন। এবার ন্যায্য দরে সূর্যমুখী বীজ বিক্রি করতে পারলে আগামীতে সূর্যমুখী চাষের জন্য জমির পরিমাণ বাড়াবেন।

রাজিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চরাঞ্চলে সূর্যমুখী চাষ লাভজনক। সূর্যমুখী চাষিরা যাতে তাদের উৎপাদিত তেল বীজ ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারেন সেজন্য তেলবীজ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। উৎপাদিত তেলবীজ বিক্রি করতে কৃষকদের কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তেল বীজ সূর্যমুখী চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এজন্য কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। চরাঞ্চলে সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক সফলতা এসেছে। আগামীতে সূর্যমুখী চাষে জমির পরিমান বাড়বে।

Comments