তরমুজ কেন বিক্রি হয় কেজি দরে

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত ৩ বছর ধরে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। আর এতে মূলত লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।
তরমুজ কেন বিক্রি হয় কেজি দরে
সাধারণ ভোক্তার যে দামে তরমুজ কেনেন তারচেয়ে চাষিরা প্রতি পিস তরমুজে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কম পান। ছবিটি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে তোলা। ছবি: সোহরাব হোসেন

রাজধানীতে চলতি মাসের শুরু থেকেই বেড়েছে তরমুজের চাহিদা। ৩ বছর ধরে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। তবে কৃষকের কাছ থেকে পাইকাররা এই তরমুজ কিনছেন পিস দরে।

সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে তরমুজের আবাদ শুরু হয়। ফলন আসে মার্চে। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত ৩ বছর ধরে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। আর এতে মূলত লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, হাতিরপুল, মিরপুর, মগবাজারসহ আরও কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়।

কারওয়ান বাজার থেকে গত বুধবার ৮ কেজি ওজনের একটি তরমুজ ৪০০ টাকায় কেনেন সরকারি চাকরিজীবী মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তরমুজ এখন কেজিতে কিনতে হচ্ছে। এর আগে পিস দরে কিনতাম। আজ যে তরমুজটি ৪০০ টাকায় কিনলাম পিস হিসেবে কিনলে এটা ৩০০ টাকার বেশি হতো না। কেজি দরে বিক্রি করায় লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, আর পকেট কাটছে সাধারণ ক্রেতাদের।'

মিরপুর থেকে তরমুজ কেনেন মো. মামুন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি কেজি ৭০ টাকা হিসেবে ৮ কেজি ওজনের ১টি তরমুজ কিনেছি। দাম অনেক বেশি মনে হয়েছে। পিস দরে কিনলে এত দাম দিতে হতো না।'

ছবি: স্টার

তরমুজ কেজি দরে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, 'আমি আড়ত থেকে কেজি দরে কিনেছি তাই কেজি দরে বিক্রি করছি। প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়। পিস হিসেবে বিক্রি করলেও গড়ে এমনি লাভ হয়।'

নিউমার্কেট এলাকায় ভ্যানে করে তরমুজ বিক্রি করেন ফজলু মিয়া। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি পিস দরে কিনি এবং কেজি দরে বিক্রি করি আবার পিস দরেও বিক্রি করি। যে যেভাবে নিতে চায় সেভাবেই দেই। প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করি। পিস নিলে সেই হিসেবে দাম ধরেই বিক্রি করি।'

কারওয়ান বাজারে তরমুজের পাইকারি বিক্রেতা ইলিয়াস এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, 'আমি কেজি দরেই তরমুজ বিক্রি করি। প্রতি কেজি তরমুজ আকার অনুযায়ী ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করি। ছোট আকারের তরমুজ ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়।'

আপনি পিস দরে কেনেন না কেজি দরে কেনেন জানতে চাইলে ইলিয়াস বলেন, 'আমি পিস দরেও কিনি আবার কেজি দরেও কিনি। কখনো আবার তরমুজের খেত কিনে নেই।'

কারওয়ান বাজারের অধিকাংশ আড়তদার কীভাবে তরমুজ বিক্রি করেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'আড়তদাররা আগে কেজি দরে বিক্রি করতেন, এখন পিস দরে বিক্রি করছেন।'

ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, বর্তমানে বাজারে যে তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো মূলত বরিশাল, পটুয়াখালী থেকে আসে।

পটুয়াখালীর কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে পাইকারি বাজারে মূলত পিস হিসেবেই তরমুজ বেচা-কেনা হয়। আকারভেদে তরমুজের দাম কম-বেশি হয়। সাধারণত ৫ থেকে ৭ কেজি ওজনের প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের প্রতি পিস তরমুজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় এবং ১০ কেজির বেশি ওজনের প্রতি পিস তরমুজ ১৩০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার জাহাজমারা চরের কৃষক জুলহাস (৪৫) ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, 'আমার ক্ষেতে উৎপাদিত প্রতি ১০০ তরমুজ গড়ে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। সেই হিসেবে প্রতিটি তরমুজের গড় মূল্য ১২০ টাকা।'

আরেক তরমুজ কৃষক ফারুক হাওলাদার জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ফলন ভালো হয়েছে এবং তরমুজের আকার অনেক বড় হয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে ৫০০ পিস তরমুজ বিক্রি করেছেন। প্রতিটির গড় দাম পেয়েছেন ১৫০ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর তরমুজের আবাদ ও ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছেন। আশা করছি প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ টন ফলন পাওয়া যাবে এ বছর। সেই অনুযায়ী পটুয়াখালীতে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টন তরমুজ উৎপাদনের আশা করছেন তারা। এখানে মূলত পিস দরেই তরমুজ বিক্রি হয়। গড়ে প্রতি টন তরমুজ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্তি দায়িত্ব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তরমুজ কেজি দরে বিক্রি হবে না পিস দরে বিক্রি হবে এই বিষয়ে কৃষি বিপণন আইনে স্পষ্ট কোনো কথা উল্লেখ নেই। কেউ যদি পিস দরে কেনেন তাকে অবশ্যই পিস দরে বিক্রি করতে হবে এবং কেজি দরে কিনলে কেজি দরেই বিক্রি করতে হবে। তবে অবশ্যই ক্রয় ও বিক্রয়মূল্য প্রকাশ্যে থাকতে হবে।'

 

Comments