পেঁয়াজের ফলন বিপর্যয়: ভালো দাম পেলে ক্ষতি পুষিয়ে যাওয়ার আশা চাষিদের

গত বছর হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৪ দশমিক ১৭ মেট্রিকটন পেঁয়াজের ফলন হলেও এ বছর ১৩ দশমিক ৬০ মেট্রিকটনের বেশি ফলন পাওয়া যায়নি।
পেঁয়াজের ভালো দামের আশায় চাষিরা
পাবনার পুস্পপারা হাটে উঠতে শুরু করেছে নতুন পেঁয়াজ। ছবি: স্টার

বিরূপ আবহাওয়ার কারণে সারাদেশে পেঁয়াজের ফলন বিপর্যয় হলেও, পেঁয়াজ কাটা শেষ হওয়ায় ঈদের পর থেকে দাম কিছুটা ভালো অবস্থানে আসা শুরু করেছে। এতে খুশি চাষিরা। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় চাহিদা পূরণে আমদানি পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করতে হবে বলে মনে করছে ব্যবসায়ীরা।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর বিরূপ আবহাওয়ায় হেক্টরপ্রতি পেঁয়াজের ফলন গতবারের তুলনায় অনেক কম হয়েছে। গত বছর হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৪ দশমিক ১৭ মেট্রিকটন পেঁয়াজের ফলন হলেও এ বছর ১৩ দশমিক ৬০ মেট্রিকটনের বেশি ফলন পাওয়া যায়নি। ফলে সারাদেশে সামগ্রিকভাবে পেঁয়াজের উৎপাদন কমে গেছে।

গত বছর (২০২১-২২) দেশে ২ দশমিক ৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করে ৩৬ দশমিক ৪০ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। এ বছর ২ দশমিক ৪৭ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হলেও এ পর্যন্ত ২ দশমিক ২০ লাখ হেক্টর জমির ফসল কর্তন করে ৩০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।

পেঁয়াজের ফলন কম হওয়ায় গত বারের চেয়ে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ কম পাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ক্রপস উইং) রবিউল হক মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর আবহাওয়া বিরূপ আচরণ করায় সারাদেশেই পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যহত হয়েছে।'

গত বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের ফলন ভালো হলেও এ বছর হেক্টরপ্রতি ফলন গত বারের চেয়ে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি কম হয়েছে বলে জানান তিনি। ফলে সারাদেশে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ মেট্রিকটন পর্যন্ত পেঁয়াজের ফলন কম পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিনে পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুর দিকে লাগানো পেঁয়াজের ফলন আশানুরূপ হলেও অপেক্ষাকৃত দেরিতে রোপণ করা পেঁয়াজের ফলন অনেক কম হয়েছে।

দেশের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল পাবনার সুজানগর উপজেলার উলাট গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মনটু খান ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। ৪ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ আগে আবাদ করায় বিঘাপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ মণ ফলন পেয়েছেন। বাকী ৪ বিঘা জমিতে নাবি জাতের (দেরিতে লাগানো) পেঁয়াজ আবাদ করায় বিঘা প্রতি ২০ মণের বেশি ফলন পাওয়া যায়নি।

গত বছর ৮ বিঘা জমিতে প্রায় ৪০০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও এ বছর একই পরিমাণ জমি থেকে ২৫০ মণের বেশি পেঁয়াজ পাওয়া যায়নি।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, এ বছর পাবনায় ৫২ দশমিক ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে ৭ দশমিক ৩৭ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। অথচ গত বছর পাবনায় ৫৩ দশমিক ৩ হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছিল ৭ দশমিক ৯৭ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ।

উৎপাদন কম হলেও প্রথম থেকেই এবার পেঁয়াজের দাম অনেক কম ছিল। তবে পেঁয়াজ কাটা শেষ হওয়ার পর থেকেই আবারও দাম ভালো অবস্থানে আসতে শুরু করেছে।

সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মো. কামরুজ্জামান জানান, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদের খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়েছে। পেঁয়াজ কাটার শুরুতে ১ হাজার ১০০ থেকে ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হয়েছে। এ দাম নিয়ে চাষিরা হতাশ থাকলেও ঈদের পর থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাবনার পুস্পপারা হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. রবিউল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের পর থেকেই পেঁয়াজের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। ফলে দামও বাড়ছে। এ বছর দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পেঁয়াজ চাষিরা জানায়, এখনই পেঁয়াজ আমদানি করলে বাজার আবারও পড়ে যাবে। ফলে লোকসানের মুখে পড়বে কৃষকরা।

তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রয়োজন অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার মত কিছু নেই।

Comments