ফলন ভালো, ৭৫ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পেয়ে খুশি মাগুরার লিচু চাষিরা। এ বছর প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফলন পাওয়ায় বেশি লাভের আশা করছেন তারা।
মাগুরা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাগুরার ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে বোম্বাই জাতের লিচু সংগ্রহ করছেন। এ বছর ৬৪০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে এবং জেলার ৪টি উপজেলা থেকে প্রায় ৮ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন লিচু সংগ্রহ করা যাবে। লিচু ধরার সময় থেকে এ অঞ্চলের প্রায় ২৫ হাজার নারী-পুরুষ বাগানে কাজ করে প্রতিদিন ৫০০ টাকা আয় করেন।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান জানান, এ বছর মাগুরা থেকে ৭৫ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
জেলার হাজরাপুর, সাচানি, লাউতারা, বারোমাইল, রামনগর, দারিয়াপুর ও নন্দলাল গ্রামে স্থানীয় ও বোম্বাই লিচু বেশি চাষ হয়। এ জেলার মাটি লিচু চাষের জন্য খুবই উপযোগী বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
একটি পরিপক্ব লিচু গাছ থেকে প্রায় ১২-১৫ হাজার ও ছোট আকারের গাছ থেকে ৬-৭ হাজার লিচু সংগ্রহ করা যায়।
লিচু চাষিরা জানান, সারা বছরই লিচু বাগানে কিছু খরচ করতে হয়। এ সময় ফসফেট ও কমপোস্ট সার প্রয়োগ করতে হয়। অল্প পরিশ্রমে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তারা জেলার আলমখালী ও ইশাখাদা বাজারে লিচু বিক্রি করেন। এই ২ বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০০ ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
ইশাখালী গ্রামের লিচু চাষি কালাম আলী জানান, তার ৩৮টি লিচু গাছের একটি বাগান আছে। গত বছর ৭ হাজার ৫০০ টাকায় বাগানটি বিক্রি করেছিলেন। এ বছর ৩৫ হাজার টাকায় সেই বাগান বিক্রি করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন পেয়েছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, তাদের এমন একটি বাজার দরকারে যেখানে স্বাভাবিক হারে লিচু বিক্রি করতে পারবেন। পাশাপাশি আবহাওয়ার কারণে যেন লিচু সংরক্ষণ করা যায় সেই ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
একই গ্রামের আরেক চাষি মোসলেম সরদার জানান, তার বাগানে ১২৫টি লিচু গাছ আছে। তিনি সেগুলো বিক্রি করেছেন ৯৫ হাজার টাকায়। গত বছর একই বাগান বিক্রি করেছিলেন মাত্র ৪৫ হাজার টাকায়। গত বছর প্রতিটি গাছ থেকে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার লিচু সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু, এ বছর প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ১৪-১৫ হাজার লিচু সংগ্রহ করেছেন। চলতি মৌসুমের প্রথম দিকে প্রতি হাজার লিচু বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। এখন প্রতি হাজার বিক্রি করছেন ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়।
লিচু ব্যবসায়ী ওহিদ হোসেন জানান, মাগুরার লিচু খুবই সুস্বাদু। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা মাগুরার লিচু সংগ্রহ করতে ভিড় জমান। তিনি এ বছর জেলার সাচিনি ও হাজরাপুর গ্রামে ৪টি লিচু বাগান কিনেছেন। সেখান থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
স্থানীয় আকাশ হোসেন জানান, তিনি গত এক মাস ধরে লিচু বাগানে কাজ করছেন। প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে পান। এই আয় দিয়েই সংসার চালাচ্ছেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান জাহিদ জানান, লিচুতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড আছে। এটি রক্ত উৎপাদনের প্রয়োজনীয় পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর লিচু চাষিরা বাম্পার ফলন পাবেন। কারণ চাষিদের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে আছে। এছাড়া কীটপতঙ্গের আক্রমণও কম। লিচুর সময় প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পান। গত ২০ বছরের তুলনায় এবার লিচুর উৎপাদন ভালো হয়েছে। খুলনা বিভাগের মধ্যে মাগুরা লিচু চাষের জন্য শ্রেষ্ঠ।'
Comments