তাপদাহে লিচুর ফলন বিপর্যয়, বেড়েছে দাম

ছবি: স্টার

দেশের অন্যতম প্রধান লিচু উৎপাদনকারী অঞ্চল পাবনায় বাগান থেকে লিচু পাড়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে লিচু। গত সপ্তাহেই পাবনা ও ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে লিচু পাড়া শুরু হয়। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় খুশি হতে পারছেন না চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
 
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে পাবনার বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছ থেকে লিচু পারছেন শ্রমিকরা। বাগানেই বাছাই করা হচ্ছে। প্রতিটি বাগানে কাজ করছেন কয়েক ডজন নারী-পুরুষ। বাগান থেকেই লিচু প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।

ঈশ্বরদীর আওতাপারা এলাকার একটি লিচু বাগানে দেখা যায় ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী এসেছেন লিচু কিনতে। পাইকারি ক্রেতাদের চাহিদামত লিচু সরবরাহ করতে বাগানের শ্রমিকরা ব্যস্ত, তবে লিচু বাছাই করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

লিচু ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিটি গাছ থেকে কমপক্ষে পাঁচ হাজার লিচু পাওয়ার কথা থাকলেও, এবার তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারের বেশি লিচু পাওয়া যাচ্ছে না।'

তিনি বলেন, 'এ বছর ১২ লাখ টাকা দিয়ে ৩০০ লিচু গাছ কিনেছেন, প্রতিটি গাছেই একই অবস্থা। বছরের শুরুতে মুকুল আসার সময় বৃষ্টির কারণে বিপুল পরিমাণ মুকুল গাছেই নষ্ট হয়ে যায়।'

'এরপর গুটি হওয়ার সময় থেকে প্রচণ্ড খরায় লিচু ঠিকভাবে বাড়তে পারেনি। বেশিরভাগ লিচু গাছেই শুকিয়ে গেছে। ফলে এ বছর আশানুরূপ লিচুর উৎপাদন হয়নি', বলেন ফারুক।

শীর্ষ লিচু চাষি ও বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির উপদেষ্টা স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষক শাজাহান আলী বাদশা ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় লিচুর উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ বছর গ্রীষ্মের প্রায় পুরো সময় জুড়েই তীব্র তাপদাহ এবং বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি বা তার বেশি থাকায় অধিকাংশ লিচু গাছেই শুকিয়ে গেছে, লিচুর রঙ নষ্ট হয়েছে। ফলে ভালো মানের লিচু বাছাই করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।'

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফলন বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় এ বছর লিচুর দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী রতন মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর প্রতি হাজার লিচু ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় কিনে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। তবে এ বছর বাগান থেকেই লিচু কিনতে ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা পড়ে যাচ্ছে, ফলে খুচরা বাজারে লিচুর দাম তিন হাজার টাকার উপরে যাচ্ছে।'

দাম বেশি হলেও বাজারে লিচুর চাহিদা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উন্নয়ন শাখার কর্মকর্তা উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. শাহ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর পাবনায় চার হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ঈশ্বরদী উপজেলাতেই প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে।'

আবাদকৃত জমি থেকে এ বছর ৫০ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শাহ আলম বলেন, 'এ বছর প্রাকৃতিক কারণে লিচুর ফলনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়লেও বাজারে দাম ভালো থাকায় চাষিদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই।'

শীর্ষ লিচু চাষি শাজাহান আলী বাদশা বলেন, 'গত কয়েক দশক ধরেই পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা লিচু উৎপাদনে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।'

কৃষকদের হিসেব অনুযায়ী এ বছর প্রায় ৭০০ কোটি পিচ লিচু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে, যা থেকে প্রায় এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে জানান তিনি।

শাজাহান আলী বাদশা বলেন, 'বর্তমান বাজারে প্রতি পিচ লিচু আড়াই টাকা থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ফলে লিচুর আশানুরূপ ব্যবসা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt plans 31% hike in food subsidy in FY26 budget

The government plans to raise the food subsidy allocation by 31 percent to Tk 9,500 crore in the upcoming fiscal year, aiming to ensure access to affordable food for poor and low-income households.

13h ago