হাইব্রিড আর বহুজাতিকের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে হাওরের দেশি প্রজাতির ধান

ছবি: ইউএনবি

বহুজাতিক কোম্পানির বাণিজ্যের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির ধান। এখন আর হাওরে দেশি জাতের বোরো ধানের আবাদ হয় না।

দুই যুগ আগেও বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে তাহিরপুর উপজেলার শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, বর্ধিতগুরমাসহ সুনামগঞ্জের ছোট বড় সবগুলো হাওরেই চাষাবাদ হতো দেশি প্রজাতির বিভিন্ন জাতের বোরো ধান।

দেশি বোরো ধান রোপণের পর তেমন কোনো যত্ন করতে হতো না। এমনকি সার ও কীটনাশকও দেওয়া হতো না। জলবায়ু সহিষ্ণু ছিলো দেশি জাতের সব কয়টি ধান। ফলন একটু কম হলেও অতিবৃষ্টি কিংবা খরাতে তেমন কোনো ক্ষতি হতো না। জমিতে সেচেরও প্রয়োজন হতো না।

কিন্তু বর্তমানে হাইব্রিড আর বহুজাতিক কোম্পানির বাণিজ্যের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের বোর ধান। বেশি ফলনের আশায় কৃষকরা ঝুঁকছেন হাইব্রিড ধান চাষাবাদের দিকে। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে সরকারও জোর দিচ্ছেন হাইব্রিড ধান চাষাবাদে।

তবে তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সংশ্লিষ্টরা জানান, তারা কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল বীজ ধানের পাশাপাশি দেশি প্রজাতির ধানের বীজ রাখার জন্যও পরামর্শ দেন। হাওর অঞ্চলে দেশি প্রজাতির যে ধানগুলো হারিয়ে গেছে তার মধ্যে রয়েছে রাতা, গচি শাইল, নাজিশাইল, লাকাই, পানি শাইল, বোর, টেপি, রঙ্গিলা টেপি, রাজাশাইল, বেগুন বিচি, কালো জিরা, বাশফুল ইত্যাদি। একটা সময় অতিথি আপ্যায়নের জন্য বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু জাতের ধানের চাল দিয়ে রান্না করা হতো। খেতেও সুস্বাদু ছিল সেসব ধানের চাল।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের লোকজন বলেছেন, দেশি জাতের ধানে ফলন কম হওযায় কৃষক এখন আর আগেরে মতো দেশি ধান চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অধিকাংশ হাওরেই এখন চাষাবাদ হচ্ছে ব্রি ধান ২৮, ব্রি ধান ২৯, ব্রি ১২০৩, শক্তি।

সরেজমিনে তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরে দেখা যায় এমন চিত্র। বিস্তৃর্ণ হাওর জুড়ে সবুজের হাতছানি। হাইব্রিড ধানই চাষাবাদ হচ্ছে হাওরজুড়ে। শনির হাওর পাড়ের ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন।

তিনি জানান, দেশি জাতের ধান চাষের উৎপাদন খরচ কম ছিল। তখন ধান কাটার মৌসুমে গ্রামে পিঠা পায়েস, চিড়া, খই, মুড়ি তৈরির ধুমও ছিল। এখন তা আর হয় না। দেশি জাতের ধান আবাদে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হতো না বলেও তিনি জানান।

মাটিয়ান হাওর পাড়ের মধ্য তাহিরপুর গ্রামের কৃষক সত্য রায় জানান, দেশি ধান চাষাবাদ করতে কোনো বীজ বাজার থেকে কিনতে হতো না। বীজের জন্য কিছু ধান আলাদা করে ঘরে তুলে রাখলেই চলত। বর্তমানে আমরা যে ধান চাষাবাদ করছি তা বীজ রাখতে পারছি না। বছরে বছরে বাজার থেকে চড়া দামে বীজ কিনতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে ধান রোপণের পর জমিতে কীটনাশক, সার, সেচ প্রচুর পরিমাণ দিতে হচ্ছে। না হলে ফলন ভালো হচ্ছে না।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, কৃষকরা বেশি লাভের জন্য তাদের জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধান রোপণ করেন।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে তারা কৃষকদের বলে দেন উচ্চ ফলনশীল বীজ ধানের পাশাপাশি দেশি প্রজাতির বীজ ধানও যেন তারা যেন সংরক্ষণ করেন।

এই কৃষি কর্মকর্তা জানান, দেশি বীজ ধানে ফলন কম হলেও বাজারে এর দাম অনেক বেশি।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshis worry amid US immigration crackdown

The United States has deported at least 31 Bangladeshis after President Donald Trump took a tough immigration policy.

4h ago