নেত্রকোণায় পানিবন্দি ৪ লাখ মানুষ, বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ৮৮ হাজার পরিবার

খালিয়াজুরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে আরও নতুন নতুন অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জেলার ১০ উপজেলা এখন প্লাবিত। এসব উপজেলার অন্তত ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।

এর মধ্যে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলাসহ বেশ কিছু এলাকার অন্তত ৮৮ হাজার পরিবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন।

আজ রোববার নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কলমাকান্দা উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় উব্দাখালী নদীর পানি ৫ সেমি কমে বর্তমানে বিপৎসীমার ৯৫ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। ৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৬২৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

কলমাকান্দার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কলমাকান্দায় পানি কমতে থাকায় এবং গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে।'

জেলার পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৮৮ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন আছেন। ছবি: সংগৃহীত

খালিয়াজুরীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় এ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে । সেনাবাহিনী আজ উপজেলায় বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতায় কাজ শুরু করেছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, খালিয়াজুরীতে ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি জানান, গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া বর্ষণ এবং উজানের ঢলে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জেলার প্রধান নদ-নদীসহ হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, খালিয়াজুরী, মদন ও মোহনগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এতে তলিয়ে গেছে মৌসুমি সবজিসহ আউশ ধানের খেত। পানিতে ভেসে গেছে সহস্রাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ। রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে আন্তঃসড়ক যোগাযোগ।

বন্যার পানির স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নেত্রকোণা-মোহনগঞ্জ রেলপথের বারহাট্টা উপজেলার অতিথপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন ইসলামপুর এলাকার রেলসেতু। এতে মোহনগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ আছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ৬ উপজেলার ২৬৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

নেত্রকোণা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যার কারণে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, খালিয়াজুরিসহ জেলার ৭টি উপজেলার কিছু সাবস্টেশন বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'জেলায় পল্লী বিদ্যুতের মোট ৫ লাখ ৯২ হাজার গ্রাহক আছে। নিরাপত্তার কারণে বর্তমানে ৮৮ হাজার  গ্রাহকের বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করা হয়েছে। পানি কমে গেলেই আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হবে।'

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, 'বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক খোঁজ-খবর রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কট্রোলরুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ সামগ্রীসহ সরকারি সব সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি।'

জেলায় মোট ৯০টি মেডিকেল টিম বন্যা দুর্গত এলাকায় কাজ করছে বলে জানান তিনি।

'পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১৫৪ মেট্রিক টন চাল, ৫ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা ও ২৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

6h ago