মাদ্রাসা শিক্ষককে মারধরের মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু। ছবি: সংগৃহীত

নাটোর সদর উপজেলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে মারধরের অভিযোগে দায়ের মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার রাত ৮টার দিকে নাটোর শহর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন নাটোর পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা।

এর আগে বুধবার সকাল ১১টার দিকে কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হয়বতপুর গোলাম ইয়াসিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকতকে মারধর করার অভিযোগ উঠে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু এবং তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকত ইউপি চেয়ারম্যান কালুসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় মামলা করলে রাত ৮টার দিকে নাটোর শহর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

হয়বতপুর গোলাম ইয়াসিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাহাবুব হাসান শরিফ জানান, প্রায় ৩ মাস আগে ওই মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়। কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের অনুসারী রিয়াজুল ইসলাম মাসুম। এতে ক্ষুব্ধ হন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু এবং তার সমর্থকরা। এরপর থেকেই তারা মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকদের চাপ দিতে থাকেন কমিটি পরিবর্তনের জন্য।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, মাস দেড়েক আগে তাকে ইউনিয়ন পরিষদে তুলে নিয়ে গিয়ে হুমকি-ধামকি দেন চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা। বিভিন্ন সময় তাকে ইউনিয়ন পরিষদে তুলে নিয়ে যেতে চৌকিদারও পাঠান চেয়ারম্যান কালু।

অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন, বুধবার সকাল ১১টার দিকে মাদ্রাসায় গিয়ে চেয়ারম্যান এবং তার সমর্থকরা শিক্ষকদের গালিগালাজ করতে থাকেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গালিগালাজ করতে নিষেধ করায় ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাফর বরকতকে মারধর করেন চেয়ারম্যান এবং তার সমর্থকরা। পরে জাফর বরকতকে তারা ধরে নিয়ে যান লক্ষ্মীপুর-খোলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদে। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসক গিয়ে ওই শিক্ষককে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ বলেন, 'মাদ্রাসা শিক্ষককে মারধর করে ইউনিয়ন পরিষদে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়েছে জানতে পেরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জামাকাপড় ছেঁড়া অবস্থায় ওই শিক্ষককে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে। পরে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এবং পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা উপস্থিত ছিলেন।'

এদিকে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বুধবার দুপুর ২টার দিকে টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় মাদ্রাসার ভিতর বহিরাগত লোকজনের ভীড় দেখতে পান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা পারসনের সঙ্গে শিক্ষক জাফর বরকতের বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। এ সময় তিনি ২ পক্ষকে থামাতে গেলে জাফর বরকত তার দিকে চেয়ার ছুড়ে মারেন।

সবার সামনে তাকে জাফর বরকত অপদস্ত করতে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে মারধর করেন বলেন দাবি করেন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু।

পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই শিক্ষককে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে যান বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা পারসন সৌম্য অধিকারী জানিয়েছেন, কলেজের কিছু অনিয়ম-দুর্নীতির খবর জানতে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে বুধবার ওই প্রতিষ্ঠানে যান তিনি। কিন্তু সেখানে ক্যামেরা বের করে কাজ শুরু করতেই শিক্ষক জাফর বরকত উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তিনি সব শিক্ষককে কোনো রকম সাক্ষাৎকার না দিতে বলেন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে জাফর বরকত তার ওপর হামলা চালান এবং ধাক্কা দিয়ে ক্যামেরা ফেলে দেন।

'পরে লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু এসে শিক্ষক জাফর বরকতকে থামতে বললে তিনি চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রতিবেদন না করেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করি', যোগ করেন সৌম্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, 'হয়বতপুর গোলাম ইয়াসিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় কী ঘটেছে তা পুলিশ তদন্ত করছে। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ যাতে ঠিক থাকে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'

এদিকে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা পারসন সৌম্য অধিকারীকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাহাবুব হাসান শরিফ বলেন, সৌম্য তার অনুমতি নিয়েই মাদ্রাসায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি অসুস্থতার কারণে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকায় সৌম্যর সঙ্গে জাফর বরকতের ভুল বোঝাবুঝি হয়।

জাফর বরকত এবং সৌম্য অধিকারীর বাকবিতণ্ডা হলেও লাঞ্ছিত করার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি দাবি করে অধ্যক্ষ মাহাবুব হাসান শরিফ বলেন, 'ক্যামেরা পারসনের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত।'

Comments

The Daily Star  | English
child victims of July uprising Bangladesh

Child victims of July uprising: Of abandoned toys and unlived tomorrows

They were readers of fairy tales, keepers of marbles, chasers of kites across twilight skies. Some still asked to sleep in their mother’s arms. Others, on the cusp of adolescence, had just begun to dream in the language of futures -- of stethoscopes, classrooms, galaxies. They were children, dreamers of careers, cartoons, and cricket.

11h ago