আপনার অফিস সবসময় মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখুন, কুষ্টিয়ার ডিসিকে আদালত

আদালতের স্থগিতাদেশ লঙ্ঘন করে নিলামের মাধ্যমে ১২৩ টাকা মূল্যের সম্পত্তি ১৫ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি বন্ধে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের নিষ্ক্রিয়তাকে তিরস্কার ও সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট।
২১ আগস্ট, গ্রেনেড হামলা
ফাইল ছবি

আদালতের স্থগিতাদেশ লঙ্ঘন করে নিলামের মাধ্যমে ১২৩ টাকা মূল্যের সম্পত্তি ১৫ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি বন্ধে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের নিষ্ক্রিয়তাকে তিরস্কার ও সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেন, 'আমরা আপনাকে সতর্ক করছি। আপনার অফিস রুমে দরজা এবং জানালায় ভারি পর্দা ব্যবহার করবেন না। আপনার অফিস সবসময় সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখুন।'

বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান এবং বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানির এ কথা বলেন।

আদালত আরও বলেন, 'আপনি কতটা বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত এবং কীভাবে আপনি আপনার ক্ষমতা ব্যবহার করেন সে বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাতে চাই, সাধারণ মানুষ জেলা প্রশাসকের অফিসে প্রবেশ করতে পারেন না এবং তারা তাদের সমস্যাগুলো উপস্থাপন করতে পারেন না। আপনার অফিস পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে এবং এ কারণে মানুষ এমনকি আপনার উপস্থিতি সম্পর্কেও জানতে পারে না।'

তবে বেঞ্চ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামকে এই শুনানিতে সশরীরে হাজিরার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয় এবং রুলের পরবর্তী শুনানির জন্য ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। তবে, অপর ৪ জনকে ২৪ অক্টোবরের শুনানিতে হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হতে বলা হয়েছে।

এর আগে, জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম আদালতের আগের নির্দেশনা মেনে হাইকোর্টের বেঞ্চের সামনে হাজির হন।

গত ১১ আগস্ট হাইকোর্টের বেঞ্চ কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. খায়রুল আলম, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আরএফ হোসেনসহ আরও ২ জনকে তলব করে ১৫ কোটি টাকা মূল্যে ১২৩ টাকা মূল্যের সম্পত্তি বিক্রির দায়ে ২১ আগস্ট এই আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।

হাইকোর্টের আদেশ লঙ্ঘনে তাদের কারণ ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আরও ২ ব্যক্তিকে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারা হলেন ওই সম্পত্তির ক্রেতা আব্দুর রশিদ (পেশায় ব্যবসায়ী) এবং কুষ্টিয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাবিরুল আলম।

হাইকোর্ট একটি রুল জারি করে উল্লেখিত ৫ জনকে ব্যাখ্যা করতে বলেছেন, মো. শফিকুল ইসলামের ১২৩ টাকার সম্পত্তি আব্দুর রশিদের কাছে ১৫ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা হবে না।

কুষ্টিয়ার আইলছড়া গ্রামের বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল ও মেসার্স ভিআইপি অটো ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলামের দায়ের করা আদালত অবমাননার আবেদনের প্রেক্ষিতে বেঞ্চ এ সমন আদেশ ও রুল জারি করেন।

ওসি সাবিরুল ছাড়াও ৪ অভিযুক্ত ব্যক্তি আজ হাইকোর্টের বেঞ্চের সামনে হাজির হন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শফিকুল ইসলামের দায়ের করা একটি রিট আবেদনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বছরের ২ আগস্ট বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল এবং মেসার্স ভিআইপি অটোফ্লাওয়ার মিলের সম্পত্তি নিলামের প্রক্রিয়ার ওপর ৩ মাসের স্থগিতাদেশ দেন এবং তাদের ব্যাখ্যা করতে বলেন কেন দৈনিক মানবকণ্ঠ ও দৈনিক মুক্তমঞ্চতে ২৪ মার্চ প্রকাশিত নিলাম প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষণা করা হবে না।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট শফিকুলকে এক মাসে ২০ কোটি টাকা দিতে এবং পরে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডকে এক বছরের মধ্যে ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলেছে, কারণ সম্পত্তিগুলো ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা হয়েছে।

'হাই কোর্টের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল ও মেসার্স ভিআইপি অটো আটা মিলের সম্পত্তি গত ৫ আগস্ট রাতে ডিসি, এসপি ও ওসির সহযোগিতায় রশিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রশিদের কাছে ১৫ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছে, যা হাইকোর্টের আদেশের চরম লঙ্ঘন ও আদালত অবমাননা', আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী যোগ করেন।

Comments