Skip to main content
T
শনিবার, মার্চ ২৫, ২০২৩
The Daily Star Bangla
আজকের সংবাদ English
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • স্বাস্থ্য
  • খেলা
  • বাণিজ্য
  • বিনোদন
  • জীবনযাপন
  • সাহিত্য
  • শিক্ষা
  • প্রযুক্তি
  • প্রবাসে
  • E-paper
  • English
অনুসন্ধান English T
  • আজকের সংবাদ
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • মতামত
  • স্বাস্থ্য
  • খেলা
  • বাণিজ্য
  • বিনোদন
  • জীবনযাপন
  • সাহিত্য
  • শিক্ষা
  • প্রযুক্তি
  • প্রবাসে

  • ABOUT US
  • CONTACT US
  • SMS SUBSCRIPTION
  • ADVERTISEMENT
  • APPS
  • NEWSLETTER
অপরাধ ও বিচার

মায়ের স্বীকারোক্তি আদায়ে কিশোর ছেলেকে ঝুলিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ

ডাকাতির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে খোদ মামলার বাদীর পরিবারের সদস্যদের ডিবি কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। সেই পরিবারের এক নারীকে টানা ৩ দিন আটকে রেখে নির্যাতনের পাশাপাশি জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে।
আকলাকুর রহমান আকাশ
শুক্রবার অক্টোবর ৭, ২০২২ ১১:২৭ পূর্বাহ্ন সর্বশেষ আপডেট: শুক্রবার অক্টোবর ৭, ২০২২ ১২:০৬ অপরাহ্ন
ডিবি
প্রতীকী ছবি।

ডাকাতির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে খোদ মামলার বাদীর পরিবারের সদস্যদের ডিবি কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। সেই পরিবারের এক নারীকে টানা ৩ দিন আটকে রেখে নির্যাতনের পাশাপাশি জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য শ্যামলী হালদার রূপাকে (৩৫) তীব্র মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তার ১৪ বছরের ছেলে দিগন্ত হালদারকে তার সামনেই হাতকড়া পরিয়ে ঝুলিয়ে পেটানো হয়।

সর্বশেষ খবর দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে।

রূপকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক শেখ ফরিদ তাদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করেছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, গত ১৮ জুন মামলা দায়েরের পর থেকে বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের নামে ওই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে রূপা ও তার ছেলে দিগন্তসহ অন্তত ৭ জনকে তাদের হেফাজতে নেন। তাদের মধ্যে ৩ জনই কিশোর।

পরবর্তীতে তাদের মধ্যে কীর্তন চন্দ্র হালদার এবং প্রতিবেশী ও কীর্তনের বন্ধু জীবন চন্দ্র পাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

যা ঘটেছিল ১৭ জুন রাতে

মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৭ জুন দিবাগত রাতে ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া মাঝিপাড়া এলাকায় কৃষক গদাধর মালোর (৬৮) বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে একদল ডাকাত ঢোকে।

৫/৬ জনের ওই ডাকাতদল বাড়ির লোকদের ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আলমারিতে থাকা নগদ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ১৩ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে। পরদিন গদাধর অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামি করে ধামরাই থানায় ডাকাতি মামলা করেন।

১৮ জুন মামলা দায়েরের পর সে সময়ের ধামরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আরাফাত উদ্দিন সন্দেহভাজন হিসেবে পাশের গ্রামের পোশাকশ্রমিক লিয়াকতকে আটক করে ২ দিন থানা হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার লিয়াকতের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে কল করেও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করে লিয়াকতের ছোট ভাই লিটন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনার সঙ্গে লিয়াকতের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় পুলিশ তাকে ২ দিন আটকে রেখে ছেড়ে দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে লিয়াকতকে শারীরিক নির্যাতনও করা হয়।'

ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় এসআই আরাফাত উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লিয়াকতকে আটক করা হলেও তাকে নির্যাতন করা হয়নি।'

ডিবি হেফাজতে রূপা

ধামরাই থানায় মামলা দায়েরের প্রায় ১ মাস পর গত ১৯ জুলাই এর তদন্তভার ডিবিতে ন্যস্ত করেন তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার। এ পর্যায়ে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিবির এসআই শেখ ফরিদকে।

গদাধর মালোর ছোট ছেলে শ্যামল হালদার ডেইলি স্টারকে জানান, মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের পর ৫ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে এসআই ফরিদ তাকে ফোন দিয়ে পরদিন সকালে তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী শ্যামলী হালদার রূপা, রূপার ১৪ বছর বয়সী ছেলে দিগন্ত হালদার ও খালাতো ভাই কীর্তন হালদারকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যেতে বলেন।

রূপাসহ ওই ৩ জনকে নিয়ে শ্যামল হালদার সাভারের ডিবি কার্যালয়ে যান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর রূপাকে ডিবির পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসাইন তার কক্ষে নিয়ে দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

শ্যামল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই কক্ষের ভেতর কামাল সাহেব ছাড়াও এসআই ফরিদ, পুলিশ সদস্য মিরাজ ও এক নারী পুলিশ সদস্য ছিলেন। ডিবির ওসি ইয়াসিন সাহেব সেখানে কিছুক্ষণ পরপর গিয়েছেন। সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের নামে বৌদিকে (রূপা) শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।'

পরিদর্শক কামাল হোসেনের কক্ষে যখন রূপাকে নির্যাতন করা হচ্ছিল তখন ওই কক্ষের বাইরেই ছিলেন শ্যামল হালদার। সে সময়ের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, 'বৌদিকে (রূপা) জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চিৎকার করে বলতে থাকেন, "দ্রুত স্বীকার কর না হলে তোর ছেলেকে ঝুলিয়ে পেটাবো"। সে সময় তাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যায়। বৌদি বারবার কেঁদে তার ছেলেকে নির্যাতন না করার আকুতি জানান।'

রূপার স্বামী ও শ্যামল হালদারের বড় ভাই কমল হালদার সেদিন ঢাকায় কর্মস্থলে ছিলেন। সংবাদ পেয়ে বিকেলের দিকে তিনি ডিবি কার্যালয়ে যান।

কমল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কর্মকর্তারা আমার স্ত্রীর সামনেই ছেলেকে মারধর করেন। সে যে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত- এই মর্মে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেন।'

দিনভর নির্যাতনের পর রাতে অভিযান

শ্যামল হালদারের ভাষ্য, ৬ সেপ্টেম্বর দিনভর নির্যাতন শেষে রাত ১২টা নাগাদ রূপা ও তার ছেলে দিগন্তকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অভিযানে বের হয় ডিবি। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রাম থেকে তুলে আনা হয় আরও ২ কিশোরকে।

তুলে আনা ২ কিশোরের একজনের বাবা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেদিন গভীর রাতে হঠাৎ সাদা মাইক্রোবাসে একদল পুলিশ এসে ২ জনকে তুলে নিয়ে যায়। এ নিয়ে পুলিশ আমাদের সঙ্গে কোনো কথাই বলেনি। পরদিন স্থানীয় মেম্বার (ইউপি সদস্য) মোখলেছসহ অন্যদের নিয়ে পুলিশের কাছ থেকে তাদের ছাড়িয়ে আনি।'

ইউপি সদস্য মোখলেসুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিবি পুলিশ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ২ জনকে ধরে নিয়ে যায়। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডাকাতির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে পরদিন দুপুরে তাদের ছেড়ে দেয়।'

মায়ের পাশাপাশি ছেলেকে ঝুলিয়ে নির্যাতন

রাতের অভিযানে ২ কিশোরকে তুলে আনার পর তাদের হাজতখানায় ঢুকিয়ে রূপা ও তার ছেলেকে আবার মারধর শুরু করে পুলিশ।

শ্যামল হালদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তারা আমার ভাতিজাকে তার মায়ের সামনেই হাতকড়া পরিয়ে রুমের ভিতরে ঝুলিয়ে পেটাতে শুরু করে। একইসঙ্গে ছেলের সামনেই পেটানো হয় মাকে। আমি কেবল বাইরে থেকে আর্তচিৎকার শুনছিলাম। এমন দুঃসহ অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।'

গত ৭ সেপ্টেম্বর সকালে শ্যামল বাড়ি ফিরে যান। দুপুরের দিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাদের মোল্লাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আবারও ডিবি কার্যালয়ে আসেন। সে সময় রূপাকে কাদের মোল্লার জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হলেও আবার ফোন করে তাদের ফিরে আসতে বলা হয়।

শ্যামল হালদার জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর ভোরে তিনি, তার বাবা গদাধর মালো, মা ও বড় ভাই কমল হালদার ঢাকার জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামানের বাসভবনে যান। সকাল ৮টার পর তারা এসপির সাক্ষাৎ পান। সেসময় পরিবারের সবাই তার কাছে পুরো ঘটনা খুলে বললে তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়ে তাদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেন।

এসপির কার্যালয় থেকে রওনা দিয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত পৌঁছাতেই আবার তাদের ফোন করে ডেকে নেওয়া হয়।

শ্যামল বলেন, 'পরে আমরা সবাই আবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশশিরা হাবীব খানের কাছে যাই। তাকে পুরো ঘটনা বলি। মারধর, নির্যাতনসহ সবকিছু। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। পরিবারের সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আমাদের বক্তব্য ও অভিযোগ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেকর্ড করেন।'

শ্যামলের ভাষ্য, তাদের বক্তব্য রেকর্ডের পর সেখানে রূপাকে নিয়ে হাজির হন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফরিদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। এ পর্যায়ে আলাদা করে রূপার বক্তব্য রেকর্ড করেন ডিবির মোবাশশিরা হাবীব খান। সেসময় রূপার তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া যাবতীয় ঘটনা ও নির্যাতনের বর্ণনা দেন। জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ করেন।

শ্যামল বলেন, 'বৌদির মুখে সব ঘটনা শুনে সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন মোবাশশীরা। সেখানে উপস্থিত ডিবি কর্মকর্তাদেরও ভর্ৎসনা করেন তিনি।'

আবার রূপার বক্তব্য রেকর্ড

শ্যামল হালদার ডেইলি স্টারকে জানান, ডিবি কর্মকর্তাদের ভর্ৎসনার পর মোবাশশিরা হাবীব খান আবার রূপার কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

রূপার বরাত দিয়ে শ্যামল বলেন, 'বৌদিকে আবার কক্ষে ডেকে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাকে ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে বলেন। তিনি (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) বলেন, "এটা ছাড়া বিকল্প নেই। বাকিটা আমি দেখছি"।'

এভাবে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে শ্যামলকে ডেকে রূপাকে সসম্মানে বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন মোবাশশিরা।

ধামরাইয়ে ফিরে রূপাকে নিয়ে আবার ২ দফা অভিযান

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সাভার ডিবি কার্যালয়ে ফেরার পর কর্মকর্তারা রাত ১১টা নাগাদ মোট ৩টি গাড়িতে রূপাসহ তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ধামরাইয়ে তাদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা পুরো বাড়ি তল্লাশি করেন। তল্লাশি শেষে রূপাকে তারা আবার জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এ পর্যায়ে রাত দেড়টা নাগাদ রূপা ও শ্যামলসহ অন্যদের নিয়ে ডিবি পুলিশ ২ মাইক্রোবাসে করে মানিকঞ্জের সিংগাইরে শাহরাইল গ্রামে রূপার বাবার বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানেও কিছু না পেয়ে ভোরের দিকে সাভারে ডিবি কার্যালয়ে ফিরে আসেন তারা।

শ্যামল বলেন, 'সিংগাইর থেকে ফেরার পথে দীর্ঘ সময় গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে ডিবি কর্মকর্তারা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোবাশশিরা হাবীব খানের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন।'

সাদা কাগজে সই নিয়ে ছাড়া হয় রূপাকে

৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শেখ ফরিদ ফোন করে রূপার শ্বশুর গদাধর মালো, স্বামী কমল হালদার ও দেবর শ্যামল হালদারকে ডিবি কার্যালয়ে ডাকেন। দুপুর ১২টা নাগাদ ডিবি কার্যালয়ে ওসির কক্ষে সাদা কাগজে সই রেখে ও হেফাজতে থাকাকালে রূপাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি- মর্মে সবার ভিডিও বক্তব্য রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

রূপার বক্তব্য

ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তির পর চিকিৎসার জন্য রূপাকে একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে তার পরিবার। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রূপার ডেইলি স্টারকে বলেন, '(হেফাজতে থাকার) পুরো সময়টাতে যে যেভাবে পেরেছে আমাকে মেরেছে। বারবার কিছু জানি না বলা সত্ত্বেও তারা আমার কথা শোনেনি। এক অফিসার (ওসি ইয়াসিন মুন্সি) ও এক নারী আমাকে কয়েকজনের নাম বলতে বলেছে। কিন্তু, যাদের নাম বলতে বলছিল তাদের কাউকেই আমি চিনি না।'

তিনি আরও বলেন, 'এক পর্যায়ে তারা আমার সামনেই ছেলেকে হাতকড়া পরিয়ে ঝুলিয়ে পিটিয়েছে। আর সহ্য করতে পারিনি, ভাই। এরপর ওরা যা বলতে বলেছে তা-ই বলেছি। এ ছাড়া, আমার কোনো উপায় ছিল না।'

জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের সময়কার বর্ণনা দিয়ে রূপা বলেন, 'ডিবি কর্মকর্তারা আমার সব কথা রেকর্ড করছিল। আমাকে এক ছেলের নাম বলতে বলে। আমি তো তাকে চিনিই না! শুনেছি আমার ছেলের সঙ্গে পড়ে। সেই রাতে তারা ওই ছেলেসহ আরেকজনকে ধরে আনে। আমার কাছে জানতে চায়, স্বর্ণ আমি কোথায় রেখেছি? বাধ্য হয়ে বলেছি আমার বাসায় আছে।'

'এরপর তারা আমার বাসায় গেলে যে স্বর্ণগুলো ডাকাতরা নিয়ে যায়নি, সেগুলো তাদের দিয়েছি। পরে তারা সেগুলো নেয়নি। এরপর আবার সিংগাইরে আমাদের বাড়িতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর আমার ছোট বোন তার ব্যবহারের স্বর্ণগুলো বের করে দেয়। ডিবি সেগুলোও নেয়নি। যা আমি নিইনি, তা আমি কোথা থেকে এনে দেব?'

রূপা ও তার পরিবারের সদস্যদের ধারণা, বিশেষ কোনো কারণে মামলাটিকে ভিন্ন খাতে নিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে রূপাকে জড়ানোর চেষ্টা করেছেন ডিবি কর্মকর্তারা।

'রূপাকে ছেড়ে দিতে দেড় লাখ টাকা নেন তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদ'

রূপার দেবর শ্যামল হালদারের অভিযোগ, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশ যখন সবাইকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যায়, তখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেখ ফরিদ রূপাকে ছেড়ে দিতে শ্যামলের কাছে ১ লাখ টাকা ও কীর্তনকে ছেড়ে দিতে ৫০ হাজার টাকা চান।

শ্যামল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শেখ ফরিদ আমাকে সতর্ক করে বলেন যে, টাকা-পয়সার বিষয়ে তিনি ছাড়া যেন অন্য কারো সঙ্গে আলোচনা না হয়। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রেও আমাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়।'

শ্যামলের ভাষ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি তার বাবা ও বড় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে যখন ডিবি কার্যালয়ে যান তখন এসআই ফরিদের রুমে তার হাতে দেড় লাখ টাকা তুলে দেন। এর মধ্যে ১ হাজার টাকার নোটের এক বান্ডিলে এক লাখ টাকা এবং ১ হাজার ও ৫০০ টাকার নোট মিলিয়ে আরেক বান্ডিলে ৫০ হাজার টাকা ছিল।

শ্যামল বলেন, 'টাকা নিয়ে বৌদিকে (রূপা) ছাড়লেও কীর্তনকে ছাড়েনি। নির্যাতন করে তাকে জোরপূর্বক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।'

'১০ সেপ্টেম্বর কীর্তন ও জীবনকে কারাগারে পাঠানো হয়। কীর্তনকেও পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর জীবন ও ৪ অক্টোবর কীর্তন জামিনে মুক্তি পায়,' যোগ করেন তিনি।

'কীর্তন বর্তমানে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে' উল্লেখ করে শ্যামল আরও বলেন, 'কীর্তনকেও ডিবি কার্যালয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। ওরা কেউই এ ঘটনায় জড়িত নয়।'

মামলার বাদী গদাধর মালো ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ছেলের বউ এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। ছেলের বউ ও নাতিকে অন্যায়ভাবে ডিবি কার্যালয়ে আটকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।'

বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক নারী ও তার ছেলেকে ডিবি কার্যালয়ে দীর্ঘ সময় আটকে নির্যাতন করা হয়েছে কেন—পুলিশকে প্রশ্ন করেছিলাম। তারা উত্তর দিতে পারেনি। পুলিশ যা করেছে তা পুরোটাই অন্যায়।'

পুলিশের বক্তব্য

রূপা ও তার ছেলেকে নির্যাতন করাসহ রূপাকে ছেড়ে দিতে পরিবারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাকা জেলা (উত্তর) ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইয়াসিন মুন্সি, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসাইন ও তদন্ত কর্মকর্তা শেখ ফরিদ।

পরিদর্শক কামাল হোসাইন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেখ ফরিদ দাবি করেন, পুরো ডাকাতির ঘটনাটি রূপার সাজানো ছিল। ২ আসামি—কীর্তন ও জীবন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এতেও রূপার নাম এসেছে। পারিবারিক কলহের জের ধরেই কীর্তন, জীবন ও কার্তিককে দিয়ে রূপা ডাকাতির ঘটনার পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন করেন।

ডাকাতির আগে রূপা নিজেই সুযোগ বুঝে জানালার গ্রিল কেটে রাখেন বলে দাবি করেন তারা।

কামাল হোসাইন বলেন, 'রূপা কিংবা তার ছেলেকে কিংবা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাদেরকেই আনা হয়েছে, কাউকেই নির্যাতন করা হয়নি। টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।'

তার ভাষ্য, 'আদালতে কীর্তন ও জীবন যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে সেখানে তারা সবিস্তারে সব জানিয়েছে। রূপাই যে পুরো ঘটনার নায়ক, সেটিও তারা বলেছে। ডাকাতির টাকার অংশ অন্যদের দেওয়ার পর বাকি টাকা ও লুট হওয়া স্বর্ণের পুরোটাই রূপার কাছে আছে।'

তাহলে রূপাকে কেন ছেড়ে দেওয়া হলো? জবাবে কামাল বলেন, 'তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। মানবিক কারণেই রূপাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাইনি তাদের সংসার ভেঙে যাক।'

রূপাকে মারধরের অভিযোগ নিয়ে ওসি ইয়াসিন মুন্সি বলেন, 'আমি কাউকেই মারধর করিনি।'

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (ডিবি) আসাদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রূপাকে নির্যাতন করা হবে কেন! তাকে নির্যাতন করা হয়নি। ডাকাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে ডাকা যেতেই পারে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা রূপার সংশ্লিষ্টতা আছে উল্লেখ করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আসামিরা সবাই আত্মীয়স্বজন।'

তিনি আরও বলেন, 'রূপাকে যদি নির্যাতন করা হয় তাহলে এত পরে বিষয়টা নিয়ে কথা উঠবে কেন? সে আমার কাছে আসতে পারে। আমরাইতো তাকে পাচ্ছি না। সে এখানে-ওখানে যাচ্ছে।'

সম্পর্কিত বিষয়:
গোয়েন্দা পুলিশডিবিনির্যাতনডাকাতি মামলামানিকগঞ্জস্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিঝুলিয়ে নির্যাতন
Apple Google
Click to comment

Comments

Comments Policy

সম্পর্কিত খবর

১ মাস আগে | রাজনীতি

শ্রমিক লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের মারামারি, আহত ১০

ফেরি চলাচল বন্ধ
২ মাস আগে | আবহাওয়া

আরিচা-কাজিরহাটে ৭ ঘণ্টা, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ৬ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ

২ মাস আগে | অপরাধ ও বিচার

‘ডিবি পরিচয়ে’ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর গাড়ি আটকে ছিনতাই

গাজীপুরের টঙ্গীতে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ৩ কর্মীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার ছেলে।
৪ সপ্তাহ আগে | অপরাধ ও বিচার

৩ ব্যক্তিকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা

টিপু-প্রীতি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পিছিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি
২ মাস আগে | অপরাধ ও বিচার

টিপু-প্রীতি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পিছিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি

The Daily Star  | English
How Bangladesh can survive in a geopolitical age

How Bangladesh can survive in a geopolitical age

Now is the time for the policymakers to think and reflect on Bangladesh's geopolitical value.

3h ago

Disqualification from parliament: The road ahead for Rahul

31m ago
The Daily Star
সাহসিকতা • সততা • সাংবাদিকতা
  • ABOUT US
  • CONTACT US
  • SMS SUBSCRIPTION
  • ADVERTISEMENT
  • APPS
  • NEWSLETTER
© 2023 thedailystar.net | Powered by: RSI LAB
Copyright: Any unauthorized use or reproduction of The Daily Star content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.