পাহাড়ে অর্থের বিনিময়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতো কেএনএফ: র্যাব
নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াসহ আরও কয়েকটি উগ্রবাদী সংগঠনকে দেশের পার্বত্য অঞ্চলে অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণে সহায়তা করে আসছিল পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।
আজ শুক্রবার দুপুরে বান্দরবান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৭ ও কেএনএফের ৩ সদস্যকে আটকের পর র্যাব এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এসময় খন্দকার আল মঈন বলেন, 'পাহাড়ে ১০ দিন যৌথবাহিনীর অভিযানে ১০ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে।'
জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার গ্রেপ্তারকৃত সদস্যরা হলেন- সুনামগঞ্জের সৈয়দ মারুফ আহমদ মানিক (৩১), পিরোজপুরের ইমরান হোসাইন শাওন (৩১), ঝিনাইদহের কাওসার শিশির (৪৬), সিলেটের জাহাঙ্গীর আহমেদ জনু (২৭), বরিশালের মো. ইব্রাহিম আলী (১৯), সিলেটের গোপালগঞ্জের আবু বক্কর সিদ্দিক বাপ্পা (২৩), সুনামগঞ্জের ছাতকের বাসিন্দা রুফুমিয়া (২৬) ও আব্দুস সালাম। এ ছাড়া, কেএনএফের গ্রেপ্তারকৃত সদস্যরা হলেন- বান্দরবানের রোয়াংছড়ির বাসিন্দা জৌথান স্যাং বাম (১৯), স্টিফেন বম (১৯) ও মাল সম বম (২০)।
খন্দকার আল মঈন বলেন, 'সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন তরুণের স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশের খবর পাওয়ার পর তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালায় র্যাব। এরপর র্যাব গোপনে অভিযানে নেমে বাড়ি ছেড়ে যেতে প্রস্তুতি নেওয়া ৪ তরুণকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। সেই তরুণদের কাছ থেকে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে র্যাবের গোয়েন্দা টিম। এরপর ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লাসহ দেশের আরও কিছু এলাকা থেকে নিরুদ্দেশ ৪ তরুণসহ জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি, প্রশিক্ষক ও আশ্রয়দাতা ৩ জনসহ মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।'
তিনি বলেন, 'এই ৭ জনের তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি ও অন্যতম অর্থসরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ ও নিরুদ্দেশ আরও ৩ তরুণসহ মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।'
এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায় যে, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি (হুজি), জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠন শুরু করে। সংগঠনটি ২০১৯ সালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারা বিশেষ করে হুজি, জেএমবি, আনসার আল ইসলামসহ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যদের খুঁজে খুঁজে নতুন সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করে আসছিলেন।'
'গ্রেপ্তারকৃত ও র্যাবের গোয়েন্দা শাখার তথ্যে আরও জানা যায় যে, এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক', বলেন তিনি।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে এসবিবিএল বন্দুক ৯টি, এসবিবিএল বন্দুকের গুলি ৫০ রাউন্ড, কার্তুজ কেস (এসবিবিএল) বন্দুক ৬২টি, আইইডি হাত বোম ৬টি, কার্তুজ কেস (এসএ) একটি, কার্তুজ বেল্ট ২টি, দেশীয় পিস্তল একটি, ওয়াকিটকি একটি, ওয়াকিটকি চার্জার ২টি, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র এবং কেএনএফের প্রস্তাবিত মানচিত্র, জঙ্গি সংগঠনের জিহাদি বইসহ প্রশিক্ষণ ও ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করে র্যাব।
তবে এই অভিযানে র্যাব ও যৌথবাহিনীর কোনো সদস্য হতাহত হননি। গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন যে, তাদের কোনো সদস্যও হতাহত হননি বলে জানান খন্দকার আল মঈন।
সেসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমাদের অভিযান এখনো শেষ হয়নি। যতদিন না পর্যন্ত পাহাড়ে লুকিয়ে থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া জঙ্গি, দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসীরা নির্মূল না হবে, ততদিন পাহাড়ে অভিযান চলবে।'
পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে কেএনএফের সঙ্গে জিহাদি উগ্রবাদীদের সম্পর্ক, অর্থযোগান ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি যে, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রথম সারির নেতা ও কেএনএফের প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে আর্থিক চুক্তিভিক্তিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হতো।'
'কেএনএফের অস্ত্র কেনাসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার অর্থ যোগান দিতো জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া এবং আরও কিছু উগ্রবাদী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এর সুবাদে তাদেরকে পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে নিরাপদে যুদ্ধ, অস্ত্র চালনাসহ বোমা তৈরির প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতো কেএনএফ', বলেন তিনি।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, 'অর্থ যোগানদাতাদের বিষয়ে ইতোমধ্যে র্যাবের গোয়েন্দা টিম কড়া নজরদারি বজায় রেখেছে। এদের বিরুদ্ধে যেকোনো সময় অভিযান পরিচালনা করা হবে।'
Comments