চোখের সামনে বাবাকে হত্যা, আইনজীবী হয়ে ২৯ বছর পর বিচার পেলেন

মামলার আইনজীবী ছিলেন নিহতের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর। ছবি: সংগৃহীত

জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ছেলের চোখের সামনে খুন করা হয় বাবাকে। সেই ছেলে নিজেই আইনজীবী হয়ে বাবার খুনের সেই মামলায় লড়ে ২৯ বছর পর বিচার নিশ্চিত করেছেন। 

গাজীপুরে খুনের মামলা দায়েরের ২৯ বছর পর ২ জনকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড ও অপর ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলার আইনজীবী ছিলেন নিহতের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর। বাবাকে খুন করার সময় তার বয়স ছিল ৬ বছর।

৩১ অক্টোবর সোমবার বিকেলে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-২ এর বিচারক বাহাউদ্দিন কাজী এ রায় ঘোষণা করেন।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেড়াইদেরচালা গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সহোদরের হাতে খুন হন সুলতান উদ্দিন (৫৫)।

মামলার রায়ে ধনাই বেপারীর ছেলে নিহতের সহোদর মাইন উদ্দিন বেপারী (৬৫) ও সৎভাই আবুল কাসেম বেপারীকে (৬০) আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন নিহতের ভাই আব্দুল মান্নান (৫৫), একই এলাকার সিরাজ উদ্দিন (৫৫), শুক্কুর আলীর ছেলে আজিজুল হক (৬০), আব্দুল কাদিরের ছেলে দুলাল উদ্দিন (৫০) এবং বেলতলী এলাকার সোনা উল্লাহর ছেলে মাঈন উদ্দিন (৬০)। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় স্থানীয় গিয়াস উদ্দিনকে (৬০) বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী নিহতের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা এলাকার ধনাই বেপারীর ছেলে সুলতান উদ্দিনের (৫৫) সঙ্গে আসামিদের জমি-সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। ১৯৯৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে সুলতান উদ্দিন তার বসত ঘরে বসে ভাই মোতাহার হোসেন ও প্রতিবেশী মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এসময় দরজা খোলা থাকায় জমির বিরোধের জেরে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ ওই ঘরের ভেতরে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে। এক পর্যায়ে তারা সুলতান উদ্দিনকে বুকে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে ঘটনাস্থলেই খুন করে। সুলতান উদ্দিনের চিৎকার শুনে বাবাকে রক্ষা করতে তার ২ ছেলে মোবারক হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ এগিয়ে গেলে তাদেরকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে জখম করে হামলাকারীরা। পরে তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা গুলি করতে করতে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন আগেও আসামিদের কয়েকজন সুলতান উদ্দিনকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এ কারণে ১৯৯৩ সালের ৩১ আগস্ট শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

তিনি জানান, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই মোতাহার হোসেন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে ১৯৯৫ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১৯৯৭ সালে গাজীপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচার কাজ শুরু হয়। দীর্ঘদিন শুনানি ও ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আদালত সোমবার এ মামলার রায় দেন। রায় ঘোষণাকালে আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। ২৯ বছরে মামলা চলাকালীন অভিযুক্ত ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা হলেন, একই এলাকার ময়েজ উদ্দিন বেপারী, মোমেন, মোস্তফা, আব্দুল ওয়াহাব ও হানিফা।

নিহতের ছেলে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বাহাদুর রায় ঘোষণার পর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমার পিতাকে যখন হত্যা করা হয়, তখন আমার বয়স ছিল ৬ বছর। আমি আমার পিতা হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে বড় হয়ে আইনজীবী হয়েছি। ২৯ বছর পর হলেও একজন সন্তান হিসেবে আমি আমার পিতা হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে পেরেছি, এটা আমার অনেক বড় পাওয়া।

Comments

The Daily Star  | English

No active militant presence in Bangladesh: home adviser

The reports of suspected extremists' deportation from Malaysia shows no links to local terrorist networks, he says

1h ago