রশিদ জালিয়াতি করে কলেজের ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ, ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

কম টাকায় পরীক্ষার ফরম পূরণ করে দেওয়ার আশ্বাসে রশিদ জালিয়াতি করে ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সাভার সরকারি কলেজের ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রশিদ জালিয়াতি করে কলেজের ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ, ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা
টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সাভার সরকারি কলেজের ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ছবি: স্টার

কম টাকায় পরীক্ষার ফরম পূরণ করে দেওয়ার আশ্বাসে রশিদ জালিয়াতি করে ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সাভার সরকারি কলেজের ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এ মামলায় মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস টেলিক্যাশ ও কলেজের ডেটা ব্যাবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত সফটওয়্যার ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান এ্যাডি সফটের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়েছে।

কলেজের পক্ষে গত ২৫ অক্টোবর সাভার মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন সাভার সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মো. ফজলুল হক।

মামলায় আসামিরা হলেন, সাভার সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র সীমান্ত জয় পাল (২১), সমাজকর্ম বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রিদোয়ানুল ইসলাম (২০), ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আবীব সাহা (২১), একই বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুচনা আক্তার মীম (২১) ও স্নাতক (পাসকোর্স) ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমরান আলী (২০)।

এই মামলার একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, সাভার সরকারি কলেজের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ২য় বর্ষ ও স্নাতক (পাসকোর্স) ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সময় কিছু শিক্ষার্থী জাল রশিদের মাধ্যমে ফরম পূরণ করে।

বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের নজরে এলে যাচাই বাছাই শুরু করা হয়৷ পরে মোট ৪০ জন শিক্ষার্থীর জাল রশিদ কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যখ্যা চাওয়া হয়। ৪০ জন শিক্ষার্থীরা বিষয়টি স্বীকার করেন। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, শিক্ষার্থী সীমান্ত জয় পাল, মো. রিদোয়ানুল ইসলাম, আবীব সাহা, সুচনা আক্তার মীম ও মো. ইমরান আলী কম টাকায় ফরম পূরণ করে দেয়ার আশ্বাসে মোট ৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৫০ টাকা আদায় করে এবং শিক্ষার্থীদের জাল রশিদ দেয়।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কলেজের ৫ শিক্ষার্থী নিজেরা উপস্থিত হয়ে অর্থ আদায়কারী প্রতিষ্ঠান টেলিক্যাশের কাছে মোট ৫৩ হাজার ১৫০ টাকা জমা দেয় যা কলেজের হিসাবে জমা হয় নি। ৩ শিক্ষার্থীর রশিদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গরমিল দেখা গেলে কলেজ কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে সন্দেহ হয়।

সাভার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইমরুল হাসান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফরম পূরণের রশিদগুলোর মধ্যে একটি রশিদ আমাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা সেটি যাচাই করতে গিয়ে দেখেন সেটি জাল। পরে বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করলে একে একে জাল রশিদগুলো আমাদের সামনে আসে। পরে আমরা জানতে পারি আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই একটি চক্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের টাকা নিয়ে তাদের জাল রশিদ দিচ্ছে। পরে কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সংশ্লিষ্ট ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করি।'

চক্রটি ইতোমধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানান তিনি।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস টেলিক্যাশ ও প্রতিষ্ঠানটির ডাটা ব্যাবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত সফটওয়্যার ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান এ্যাডি সফটের বিরুদ্ধেও।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইমরুল হাসান বলেন, 'শিক্ষার্থীদের জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসার পর আমরা যখন জোর তদন্ত শুরু করি। তখন দেখা যায়, আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করা টেলিক্যাশও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে রশিদ দিচ্ছে, অথচ আমাদের কলেজের ব্যাংক হিসাবে সেই টাকা জমা হচ্ছে না। আবার ব্যংকে টাকা জমা না হলেও কলেজের সফটওয়্যার সিস্টেম থেকে শিক্ষার্থীদের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে দেখাচ্ছে। এর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান এ্যাডি সফটের হাতে। পরে আমরা প্রতিষ্ঠান দুটির সংশ্লিষ্টদের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছি একইসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে টেলিক্যাশের সঙ্গে লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছি।'

এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এটিকে সফটওয়্যার জনিত সমস্যা বলে দাবি করেন মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস টেলিক্যাশ এর জোনাল ম্যানেজার মো. ইসমাইল।

তিনি বলেন, 'আসলে এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো সমস্যা না, কেউ টাকা আত্মসাৎ করেনি। মূলত সিস্টেমে ত্রুটির কারণে এটি হয়েছিল, আমরা আজকের মধ্যে সাভার কলেজের যেই টাকা, প্রায় ৫৬ হাজার, তাদের হিসাবে জমা করে দিচ্ছি। তবে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু সাভার কলেজের দায়িত্বে আমাদের জসিম নামে যেই কর্মকর্তা রয়েছে, তার কোনো গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এ্যাডি সফটের সার্ভিস অপারেটর মো. রাব্বানী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আসলে কীভাবে কী হয়েছে তা আমার জানা নেই। যদিও প্রতিষ্ঠানের এক্সেস আমাদের হাতে। তবে ব্যাংকে টাকা জমা হওয়া তো আমরা দেখি না, একই সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেহেতু টেলিক্যাশ টাকা পেমেন্ট করে, যখন টেলিক্যাশ শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা নেওয়ার পরে সফটওয়্যারে এন্ট্রি দেয়, সেই রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা আবার শিক্ষার্থীদের হিসাব থেকে সেটি ক্লিয়ার দেখাই। ব্যাংকে যদি টাকা জমা না হয় সেই দায় টেলিক্যাশের।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. সজল খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অভিযুক্তদের মধ্যে ৩ জন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এসেছে, বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও টেলিক্যাশ ও এ্যাডিসফটের কার কেমন ভূমিকা রয়েছে, সেটি তদন্ত শেষে জানা যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka denounces US 2023 human rights report

Criticising the recently released US State Department's 2023 Human Rights Report, the foreign ministry today said it is apparent that the report mostly relies on assumptions and unsubstantiated allegations

15m ago