ছাত্রদল নেতার মৃত্যুতে আ. লীগের ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ছাত্রদল নেতা অমিত হাসান অনিক হত্যার ঘটনায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করা হয়েছে। 

মৃত্যুর ১৮ দিন পর আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে অনিকের বাবা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ৩ নম্বর আমলী আদালতে মামলার আবেদন করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মামলার আবেদন আমলে নিয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশকে অনিকের মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত ও মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে দাখিলের আদেশ দিয়েছেন এই আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলম।

এ মামলায় আসামি করা হয়েছে রূপগঞ্জ উপজেলার মর্তুজাবাদ এলাকার বাদশা ভূঁইয়ার ছেলে ভুলতা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ভূঁইয়া (৪৩), পঁচাইখা গ্রামের আক্কাস মিয়ার ছেলে ভুলতা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল শিকদার (৪২), একই এলাকার অছু মিয়ার ছেলে ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহ্ আলম (৪২), বলাইখাঁ এলাকার আবু সিদ্দিকের ছেলে বাবু ওরফে কালাই বাবু (৩৫), পলখান এলাকার আরমান মিয়ার ছেলে রাসেল (৩০), আমলাব এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে শাহীন মিয়া (৪০), বেলদীর আনোয়ার মোল্লার ছেলে জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩০), পঁচাইখাঁ এলাকার আনর আলীর ২ ছেলে মো. ওবায়দুর (৩০) ও আলাউদ্দিন (৪৫), সিংলাব এলাকার মোতালেবের ছেলে মিজান (৪৫), টেক বলাইখাঁ এলাকার সিদ্দিকের ছেলে রাজীব (২৬), একই এলাকার জজ মিয়ার ছেলে রানা (২৩), মর্তুজাবাদ এলাকার হারুনের ছেলে রিফাত (২৭), পঁচাইখাঁ এলাকার বাচ্চু মিয়ার ছেলে ইমরান (৩২)। এ ছাড়া অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নিহত অমিত হাসান অনিক রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার চরপাড়া এলাকার আমির হোসেনের ছেলে। কাঞ্চন পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহসভাপতি অনিক একটি বেসরকারি ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান দ্য ডেইলি স্টার বলেন, 'গত ৩ নভেম্বর ছাত্রদল নেতা অনিক হাসান যাওয়ার পর স্বজনরা থানায় মামলা নেয়নি। ফলে ১৮ দিন পর নিহতের পিতা আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন। বাদীর পক্ষে মামলার আবেদন করলে তা আমলে নিয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুর ঘটনা এবং পরবর্তীতে কেন মামলা গ্রহণ করা হলো না সে সম্পর্কে রিপোর্ট চেয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে থানা পুলিশকে নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্টও দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। থানা পুলিশের রিপোর্ট দাখিলের পর আদালত পরবর্তী আদেশ দেবেন।'

ছেলের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে নিহতের পিতা আমির হোসেন বলেন, 'আমার একটাই ছেলে ছিল। সে আজ নাই। আমি চাই, আর কারও ছেলে যাতে এইভাবে মারা না যায়। আমি সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার চাই।'

মামলার আবেদনে যা বলা হয়েছে

মামলার আবেদনে বাদী উল্লেখ করেছেন, 'গত ৩ নভেম্বর ভুলতা ফ্লাইওভার রোডে ছাত্রদলের মশাল মিছিল শেষে অটোরিকশায় বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যা ৭টায় ভুলতা-কাঞ্চন হাইওয়ে রোডের মুন্সি পাম্প ও পুনাব প্রাইমারি স্কুলের রাস্তার মাঝখানে আসামিরা অনিকের ওপর হামলা চালায়। ধারলো রাম দা, ছেনি, লোহার রড, হকিস্টিক ও পিস্তলসহ হামলা চালিয়ে অনিককে রক্তাক্ত জখম করে। পরে আসামিরা অনিককে টেনে-হিচড়ে চলন্ত ট্রাকের নিচে ফেলে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে সে মারা যায়।'

বাদী মামলার আবেদনে অভিযোগ করেন, 'অনিকের মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে রূপগঞ্জ থানার ওসি মামলা গ্রহণ করেননি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সংগ্রহ করে জানা যায়, মাথায় আঘাতের কারণে মৃত্যু হয়েছে অনিকের। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। থানায় মামলা না নেওয়ায় আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন বাদী।'

মামলা না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদের সরকারি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

 

Comments

The Daily Star  | English
rooppur-nuclear-power-plant

Gridline woes delay Rooppur Power Plant launch

The issue was highlighted during an International Atomic Energy Agency (IAEA) inspection in March

1h ago