কুলাউড়া-কমলগঞ্জে ১৫ দিনে ১৫ মোটরসাইকেল চুরি
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলায় সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। গত ১৫ দিনে এই ২ উপজেলা থেকে ১৫টি মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এই তালিকায় বিমানবাহিনী ও পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সাংবাদিকরাও আছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চোর চক্রের সসদ্যদের ধরতে পুলিশ যথেষ্ট তৎপর না। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় থানায় কয়েকটি সাধারণ ডায়রি করা হলেও মামলা দায়ের করা হচ্ছে না। মামলা না হলে সুরাহা পাওয়াটা কঠিন।
কুলাউড়ার স্থানীয় সাংবাদিক সঞ্জয় দেবনাথ জানান, গত সোমবার সন্ধ্যায় পৌর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি চুরি হয়ে যায়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ চুরি যাওয়া মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করতে পারেনি।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্রাম উন্নয়ন কার্যক্রম'র ব্যবস্থাপক অবিনয় কুমার পাল জানান, এই সংস্থার ৬টি মোটরসাইকেল সবসময় গ্যারেজে রাখা হয়। সেখান থেকেই দিনের বেলায় ২টি মোটরসাইকেল সম্প্রতি চুরি হয়ে গেছে।
অবিনয় কুমার পাল বলেন, 'আমরা চুরির বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। বরং আতঙ্কে আছি, বাকি মোটরসাইকেলগুলো না চুরি হয়ে যায়।'
কুড়াউড়ার মাগুরা এলাকার আরেক বাসিন্দা পাভেল বক্সের কাছ থেকে মোটরসাইকেল চুরির একইরকম অভিযোগ পাওয়া যায়।
কুলাউড়া সাংবাদিক সমিতির সাধারন সম্পাদক সাইদুল হাসান সিপনের ভাষ্য, মোটর সাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে না পারলে চুরি থামবে না। তিনি বলেন, 'চুরির পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এরপর আর খোঁজ থাকে না। পরে নিজ উদ্যোগে নিজের চুরি যাওয়া মোটর সাইকেলের সন্ধান করতে করতে এক সময় থেমে যেতে হয়।'
এদিকে কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাকের কাছ থেকে জানা যায়, গত সপ্তাহে শমশেরনগর বাজারের একটি বাসা থেকে বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট জহুরুল ইসলামের একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। একই সময়ে পাশের আরেকটি বাসা থেকেও মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। ২ ঘটনায় থানায় আলাদা ২টি ডায়রি করা হয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাকের ভাষ্য, চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার ও চোর চক্রকে আটকের জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা।
কুলাউড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলমের বাড়িও কমলগঞ্জের শমশেরনগর এলাকায়। গত শুক্রবার বাড়ির গ্যারেজ থেকে তার মোটরসাইকেলটিও চুরি হয়ে যায়। তিনি বলেন, 'আমি জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। এসে দেখি মোটরসাইকেল নেই। এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেছি।'
কমলগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নুরুল মুহায়মিন মিল্টনের দাবি, কমলগঞ্জ উপজেলায় গত ১৫ দিনে অন্তত ৯টি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পুলিশের ওপর আস্থা না থাকায় ভুক্তভোগীদের অনেকে থানায় ডায়রি পর্যন্ত করেননি।
নুরুল মুহায়মিন বলেন, 'পুলিশের সঠিক তদারকি না থাকায় চুরি করে পার পেয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ চোর চক্র।'
বিষয়টি নিয়ে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সুদর্শন কুমার রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের কাছে যে কয়টা অভিযোগ এসেছে সেগুলোর বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে চক্রটি মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত তারা জেলা শহরের বাইরের। আমরা ইতোমধ্যে কিছু তথ্য পেয়েছি। আরও তথ্যের জন্য আমাদের কাজ চলছে।'
চোর চক্রের 'মূল হোতা' আটক
এদিকে গতকাল বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সম্ভুপুর রেললাইন সংলগ্ন বস্তি থেকে মোটরসাইকেল চোর চক্রের এক সদস্যকে আটক করার কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তার নাম রিপন মিয়া (৩০)। র্যাবের দাবি, রিপন এই সংঘবদ্ধ চোর চক্রের মূল হোতা। তার নেটওয়ার্ক দেশজুড়ে।
বিষয়টি নিয়ে র্যাব-৯ সিপিসি-১ হবিগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রিপন কৌশলে ১ মিনিটেই মোটরসাইকেল আনলক করতে পারেন। মোটরসাইকেল চুরির অভিজ্ঞতা তার দীর্ঘদিনের। দলবল নিয়ে হবিগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেল চুরির পর দেশের বিভিন্ন জেলায় থাকা সহযোগীদের মাধ্যমে বিক্রি করতেন তিনি। আত্মগোপনে থাকতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব থানা এলাকায়।'
র্যাব জানায়, রিপন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলা গ্রামের নূর আলীর ছেলে। চুরি-ডাকাতির অভিযোগে অনেকগুলো মামলা আছে তার নামে।
Comments