অপরাধ ও বিচার

অতিদরিদ্রের তালিকায় ইউপি সদস্যের ১১ স্বজন, বক্তব্য জানতে চাওয়ায় হামলা

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পে আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাংবাদিকদের শাসাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পে আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যের অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজ রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা হলেন, আংগারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আলিমুল হক মোল্লা।

সেসময় হামলাকারীরা সাংবাদিকদের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা জানান, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে আংগারিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে আজ দুপুরে শরীয়তপুরে কর্মরত ৫ সাংবাদিক ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হাওলাদের বক্তব্য জানতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান। সেসময় চেয়ারম্যান উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং তিনিসহ ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আলিমুল হক মোল্লা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান। তারা এখন টেলিভিশন ও চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের সাংবাদিকের মাইক্রোফোন ও ক্যামেরা এবং দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এ ছাড়াও, তারা সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি ও চাঁদাবাজি মামলায় জড়ানোর ভয় দেখান।

প্রথম আলোর শরীয়তপুর প্রতিনিধি সত্যজিৎ ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির কাজ শুরু হয়েছে। আংগারিয়া ইউনিয়নে ৬৮ শ্রমিকের অনুকূলে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের চরচটাং গ্রামে ১৪ জন শ্রমিককে দিয়ে একটি মাটির রাস্তা সংস্কার চলছে। ওই প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনকে।'

'এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন ওই ১৪ শ্রমিকের নামের তালিকায় তার স্ত্রী নাছিমা বেগম, ছেলে আলিমুল হক মোল্লা, মেয়ে সোনিয়া বেগম, ছেলের স্ত্রী হালিমা আক্তার, ভাই আবু সিদ্দিক মোল্লা, ছেলের শাশুড়ি ও শ্যালিকাসহ মোট ১১ আত্মীয়ের নাম যুক্ত করেন। যা নীতিমালা বহির্ভূত। তাদের নামে বিকাশ নম্বরে শ্রমিকের মজুরি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইউপি সদস্যের পরিবারের কেউ মাটি কাটা শ্রমিকের কাজ করেন না', বলেন তিনি।

সত্যজিৎ ঘোষ আরও বলেন, 'এই অনিয়মের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের কাছে জানতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি। হামলার পাশাপাশি সেসময় আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।'

শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তারই একটি 'অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি' প্রকল্প। ওই প্রকল্পের আওতায় বছরে ২ দফা ৪০ দিন করে দরিদ্র মানুষ কাজের সুযোগ পান। প্রকল্পের শ্রমিকরা মাটিকাটা, রাস্তার ঘাস পরিষ্কার ও ডোবার কচুরিপানা পরিষ্কারসহ বিভিন্ন কাজ করেন। এ কাজের জন্য শ্রমিকদের প্রতিদিন ৪০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শ্রমিকের তালিকা প্রস্তুত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে ওই শ্রমিকদের বিকাশ নম্বরে কাজের টাকা পরিশোধ করা হয়।

২০২১-২২ অর্থবছরে চরচটাং গ্রামে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ২০ জন শ্রমিকের বিপরীতে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন তার পরিবারের সদস্যদের নামের তালিকার বিকাশ নম্বর দিয়ে ওই টাকা উত্তোলন করেছেন। সেই প্রকল্পে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ধানখেতে ৫০ মিটার রাস্তা সংস্কার করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

নতুন প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিক ইকবাল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ৭ জন শ্রমিক ৬ দিন কাজ করে একটি রাস্তা সংস্কার করেছি। আরেকটি রাস্তার ৯০ মিটার সংস্কার করছি। ওই দুটি রাস্তার জন্য আমাদের ৮০ হাজার টাকা বিল দেওয়া হবে। ইউপি মেম্বারের ছেলে আলিমুল চুক্তি অনুযায়ী আমাদের টাকা দিচ্ছেন।'

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পে কোনো অবস্থায় এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম থাকতে পারবে না। যা নীতিমালা বহির্ভূত। এ ক্ষেত্রে ইউপি মেম্বারের কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক ইউপি চেয়ারম্যান শরীয়তপুরে কর্মরত কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা করেছেন এমন তথ্য পেয়েছি। তারা মৌখিকভাবে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Three difficult choices to heal economy

Bangladesh yesterday made three major decisions to cushion the economy against critical risks such as stubborn inflation and depletion of foreign currency reserves.

3h ago