আদালত থেকে ৪ মাদক মামলার নথি ‘গায়েব’

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার একটি আদালত থেকে প্রায় ১০ মাস আগে ৪টি মাদক মামলার নথি গায়েব হয়ে গেছে। ফলে আদালতের রেকর্ড রুমের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত ৭ থেকে ২১ বছরের মধ্যে দায়ের করা মামলাগুলো ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এ বিচারাধীন রয়েছে। তবে, রেকর্ড রুম থেকে নথি গায়েব হওয়ার পর বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে।

আদালতের পেশকার মোহাম্মদ আশেক আলী জানান, গত ১২ জানুয়ারি তিনি আদালতে যোগদানের কয়েক দিন পর জানতে পারেন যে, মামলাগুলোর নথির হদিস নেই। এরপর থেকেই তিনি নথিগুলো খোঁজা শুরু করলেও এখনো পাননি।

গত ৫ জুন তিনি বিচারক আবু সালেহ্ মোহাম্মদ রুহুল ইমরানকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানান। কিন্তু, আদালতে বিচারক আবু সালেহ্ মোহাম্মদ রুহুল ইমরানের শেষ কর্মদিবস ৮ জুন হওয়ায় আশেকের আবেদন গ্রহণ করেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি তিনি।

ওই মাসের শেষের দিকে আশেক সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারকে চিঠি লিখে এ বিষয়ে তদন্তের অনুরোধ করেন।

চিঠিতে তিনি সন্দেহভাজন হিসেবে তৎকালীন বিচারক আবু সালেহে্র গাড়িচালক মোহাম্মদ রাসেলের নাম উল্লেখ করেন।

চিঠিতে বলা হয়, রাসেল প্রায় ১৪ বছর ধরে আদালতে কর্মরত আছেন। আদালত চলাকালীন বিভিন্ন সময় রাসেল স্টোররুমে বিভিন্ন মামলার নথি খোঁজ করতেন এবং অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন লোককে নথির অনুলিপি সরবরাহ করতেন।

'আমি যখন রাসেলের এ বিষয়টি উত্থাপন করি, তখন তিনি খুব নাখোশ হন। গত ৩০ জানুয়ারি তিনি আমাকে ও আদালতের কর্মচারী জহুরুল ইসলামকে হুমকি দিয়ে বলেন, তিনি আমাদের পেনশন সুবিধা বাতিল করে দিতে পারেন।'

চিঠির সঙ্গে তিনি রাসেলের বিরুদ্ধে অতীতে করা বিভিন্ন অভিযোগ ও নিম্ন আদালতের বিচারকদের কাছ থেকে পাওয়া সতর্কবার্তার বিবরণসহ বেশ কয়েকটি কাগজপত্র জমা দিয়েছেন।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে আশেক বলেন, 'রাসেল গত ২১ জুন আদালত চত্বরে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো হুমকি দিয়ে বলেন, বিচার বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের গাড়িচালকদের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি বিচারকদের গাড়ি চালাই। আমি আদালতের গাড়ির তত্ত্বাবধায়ক, নথির নয়। পেশকার ও পিয়নরা নথির তত্ত্বাবধায়ক।'

বিশিষ্ট ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ খুরশিদ আলম খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদি প্রকৃতপক্ষেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তা মামলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।'

এ ধরনের ঘটনা বিচার বিভাগের জন্যও একটি 'সাংঘাতিক বার্তা' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।'

আরেক ফৌজদারি আইনজীবী মোহাম্মদ শাহীনুর ইসলাম বলেন, 'আদালত আমাদের তত্ত্বাবধায়ক। যদি আদালত থেকে নথি গায়েব হয়ে যায়, তাহলে আদালতের ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাবে।'

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী গত মাসে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।'

গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার থাকাকালীন রব্বানী বলেন, 'আমার জানামতে, সংশ্লিষ্ট আদালত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।'

৪ মামলা

২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থেকে ১০ গ্রাম হেরোইন বহনের অভিযোগে হারুন-অর-রশিদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। পরের বছরের জানুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

২০১১ সালের মার্চে মিরপুরের দারুস সালাম এলাকা থেকে ১২ বোতল ফেনসিডিল 'রাখার' অভিযোগে রাবেয়া বেগম ও মেহেরুন নেসাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই মাসের শেষের দিকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে পল্লবী থেকে আবু তাহের লিটন নামে এক ব্যক্তিকে ১০ বোতল ফেনসিডিল 'রাখার' অভিযোগে আটক করে পুলিশ। পল্লবী পুলিশ পরের মাসে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করে।

২০১৫ সালের মে'তে যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় এলাকা থেকে শিপন ও মোহাম্মদ জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং তাদের কাছ থেকে ১৫০টি পেথিডিন ইনজেকশন 'উদ্ধার' করা হয়। ওই মাসেই যাত্রাবাড়ী পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

আসামিরা সবাই জামিনে মুক্ত হয়ে জেলের বাইরে আছেন।

প্রথম ৩ মামলায় সাজা দুই থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং শেষটিতে সাজা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এ বছরের জানুয়ারি ও এপ্রিলের বিভিন্ন তারিখে মামলাগুলোর শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও নথি খুঁজে না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Israeli military says attacking military infrastructure in Tehran, Western Iran

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

16h ago