ঘরেও ভাই-বোনের ঝগড়া হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সমস্যাটার সমাধান না হলেও প্রশমিত হয়েছে।
আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সমস্যাটার সমাধান না হলেও প্রশমিত হয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, 'প্রথমে আইনজীবীরা সব আদালত বর্জন করেছিলেন। অন্যদিকে বিচার বিভাগের কর্মচারীরাও কর্মবিরতি করেছিলেন। এখন আইনজীবীরা দুটি আদালত ছাড়া সব আদালতে মামলা করছেন এবং কর্মচারীরাও কাজ করছেন। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে যদি দেখি, সমস্যাটা সমাধান না হলেও প্রশমিত হয়েছে; এটুকু আমরা বলতে পারি।'

'ঘরেও ভাই-বোনের ঝগড়া হয়। দুদিন কথা বন্ধ থাকে, তৃতীয় দিনে কথা শুরু হয়। বার এবং বেঞ্চের ভাই-বোন, পরিবারের মতোই সম্পর্ক। সেখানে এ রকম বিবাদ হতে পারে। এটা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথম হয়েছে তা নয়। এটা আদালতে হয়ে থাকে আবার মীমাংসাও হয়ে যায়। আমার আশা, এই সমস্যাটা খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হবে,' বলেন তিনি।

আনিসুল হক বলেন, 'বিচার বিভাগ স্বাধীন, আইনজীবীর স্বার্থ দেখার দায়িত্বও আমার। যেখানেই এ রকম ছোটখাটো ঘটনা হয়েছে; আমি বলবো না হস্তক্ষেপ, আমরা সেখানে গিয়ে সমস্যা সমাধান করার জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছি এবং সমস্যার সমাধান করেছি। ব্রাহ্মণবাড়ির সমস্যাটা আগে আমার কানে এলে এতদূর হয়তো গড়াতো না।'

প্রসঙ্গত, গত ১ ডিসেম্বর ৩টি মামলা না নেওয়ায় ১ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। ২ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা ৩ কার্যদিবসের কর্মবিরতির ডাক দেন। ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা মোট ৬ কার্যদিবস কর্মবিরতি পালন করেন। ৪ জানুয়ারি ১ দিনের কর্মবিরতি পালন করে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন।

রোববার সকাল থেকে জেলা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বাদে জেলার বাকি সব আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

তারা এই ২ বিচারকের আদালত প্রত্যাহার অব্যাহত রেখেছেন এবং ২৪ জানুয়ারির মধ্যে তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বদলি ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আলটিমেটাম দিয়েছেন।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু-এর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেছেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কখনো কারো সম্পর্কে ভালো লেখে না কিন্তু বাংলাদেশের মানবাধিকারের উন্নতি হয়েছে সেটা তারা লিখেছে। আমরা র‌্যাবের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা হয়তো দিতাম কিন্তু আমরা দেখেছি, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরে র‌্যাব অনেক ভালো কাজ করেছে। আমরা বুঝি র‌্যাবেরও প্রয়োজনীয়তা আছে।'

'উনি (ডোনাল্ড লু) এ কথা বলেননি অংশগ্রহণমূলক বা নির্বাচন এভাবে হতে হবে ওভাবে হতে হবে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উত্তরণ হোক এবং উত্তরণের পদ্ধতিগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করা হোক,' বলেন আনিসুল হক।

র‌্যাবের ওপর থেকে কবে নাগাদ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, 'আমি এ ব্যাপারে কথা বলিনি, কারণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আইনি পদ্ধতি আছে। আমরা সেই পদ্ধতি অনুযায়ী এগোচ্ছি। আশা করি, আইনি পদ্ধতিতে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।'

সংস্কারের কোনো সুপারিশ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সুপারিশ আসুক বা না-আসুক, র‌্যাবের কোনো সদস্য ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় বা অপরাধ করলে র‌্যাব তদন্ত করে এবং ব্যবস্থা নেয়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারও একটি চলমান প্রক্রিয়া।'

গত ১৫ জানুয়ারি হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজায় অংশ নেন এক ছাত্রদল নেতা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, 'এগুলো আমাদের নজরে এসেছে। কী পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে সেগুলো অনুসন্ধান চলছে।'

Comments