গাজীপুরে রবিউলের সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে জানে না কেউ
গাজীপুরের বাসন থানার কাছে ভোগড়া বাইপাস এলকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যবসায়ী রবিউল আহত হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দিনগত রাত অনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে জানানো হয়েছে।
তবে দ্য ডেইলি স্টার প্রতিবেদক ওই এলাকার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে এমন কাউকে খুঁজে পাননি যিনি দুর্ঘটনাটি ঘটতে দেখেছেন বা শুনেছেন।
স্থানীয় ভ্যানচালক সজীব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সব সময় থানার আশপাশে ট্রিপের আশায় বসে থাকি। আমার মতো অনেকই ভ্যান নিয়ে এখানে থাকে। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে ট্রাকের ধাক্কায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে এমনটি দেখিনি।'
ভ্যানগাড়িতে ঘুরে সবজি বিক্রি করেন শহীদুল। তিনি বলেন, 'থানার আশপাশে ভোগড়া বাইপাস এলাকায় সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় কেউ আহত হয়েছেন এমন ঘটনা আমরা শুনিনি।'
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক সেখানকার একাধিক দোকানদার জানান, একটি দুর্ঘটনা ঘটলে বা কেউ দুর্ঘটনায় মারা গেলে এটা অনেকেই জেনে থাকে। কেউ না দেখলেও দুর্ঘটনার খবর কিছু সময় পরে হলেও অনেকে জানতে পারে। কিন্তু ট্রাকের ধাক্কায় রবিউল আহতের খবর তারা শোনেননি।
এ বিষয়ে নিহত রবিউলের শ্যালক মো. রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি রবিউলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন।
রফিকুল বলেন, 'রবিউলের নাক-মুখে রক্ত, ২ পায়ের তালু, গোড়ালি ফাটা ও রক্তাক্ত ছিল। দুর্ঘটনায় সাধারণত এমন আঘাত থাকে না। কেউ মারপিট অথবা আঘাত করলে এমন চিহ্ন দেখা যায়।'
রবিউলের পরিবার শোকাহত, এ অবস্থায় তারা আইনগত ব্যবস্থা বা মামলা করবে কি না তা নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি উল্লেখ করে রফিকুল জানান, বুধবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে রবিউলের মরদেহ গ্রহণ করা হয়। পরে স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জে তাদের গ্রামের বাড়ি পৌঁছান। বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশেই নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তিনি বলেন, 'রবিউলের বাবা জীবিত রয়েছেন। ছেলের এমন মৃত্যুতে তিনিও বাকরুদ্ধ। স্বজনেরা সবাই বাড়িতে এসেছেন, শোকাহত পরিবেশ চলছে। এমন অবস্থায় ইচ্ছা থাকলেও কেউ আইনি পদক্ষেপ নিতে সাহস করে না। স্বজনদের মধ্যে পরামর্শের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থার বিষয়টি পরে নির্ধারিত হবে।'
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-অপরাধ) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান বলেন, 'গাজীপুর মহানগর পুলিশ রবিউলের সুরতহাল করেছে। সেখানে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর আলামত মিলেছে। নাকে মুখে, পায়ে দুর্ঘটনাজনিত রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।'
তিনি বলেন, 'পোস্ট মর্টেমের আগে হাসপাতাল থেকে একটি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হয়। সেখানে দুর্ঘটনাজনিত আলামত পাওয়া গেছে। রবিউলের স্বজনেরা চিকিৎসকদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের সার্টিফিকেট পেয়ে পোস্টমর্টেম করবে না বলে বিনা ময়না তদন্তে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য শাহবাগ থানায় আবেদন করেছে। পরে আর ময়না তদন্ত হয়নি।'
ডিসি আরও বলেন, 'এ ব্যাপারে নিহত রবিউলের ভাই বাসন থানায় একটি দুর্ঘটনা মামলা করেছেন। পুলিশ বক্স ভাঙচুর, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ব্যক্তি চিহ্নিতের প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে মামলা হবে।'
রবিউলকে শনিবার থানায় আনা ও নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগের ব্যাপারে সিসি ক্যামেরার ভূমিকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাসন থানায় সিসি ক্যামেরাটি সরকারিভাবে বরাদ্দ হয়নি। তাছাড়া ক্যামেরাটি বেশ কিছুদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে।'
গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগান শাহনাজ গলির রবিউল ইসলামকে পুলিশ নির্যাতনের পর হত্যা এবং এ নিয়ে প্রচার হওয়া খবরে বুধবার সকাল ১০টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।
Comments