ভুয়া ফেসবুক পোস্টের অভিযোগে ৪ শিক্ষার্থীকে পুলিশের মারধর

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

নরসিংদীতে শিক্ষকের সমালোচনা করে ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে মাদ্রাসা সুপারের সামনে ৪ শিক্ষার্থীকে আটক ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ৪ শিক্ষার্থী এ অভিযোগ করেছেন।

পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাদা কাগজে সই করে পুলিশের হাত থেকে ওই শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নরসিংদীর আলোকবালী ইউনিয়নের চর মাধবপুর মদিনাতুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় ছাড়পত্র আনতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।

ওই শিক্ষার্থীরা সদ্য অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং তাদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।

এক শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে আমরা ৪ বন্ধু মাদ্রাসা থেকে ছাড়পত্র আনতে মাদ্রাসা সুপার জয়নুল আবেদীনের কক্ষে যাই। এসময় তিনি ছাড়পত্র তৈরি করতে সময় লাগবে জানিয়ে বাইরে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেন। আমরা অপেক্ষার পর আবারও মাদ্রাসায় যাই। এসময় সুপারের কক্ষে এসআই আলীম হোসেনের নেতৃত্বে ৫-৬ জন পুলিশ সদস্য আমাদের মারধর করেন। তখন মাদ্রাসা সুপারসহ আরও ৩ জন সহকারী শিক্ষক সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।'

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'মারধরের সময় এসআই আলীম আমাদের বলেন, মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ফেসবুকে আর লিখব কি না? এসময় তিনি গালিগালাজও করেন। পরে পুলিশ আমাদের কাজিরকান্দি ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।'

'মাদ্রাসা থেকে এবার দাখিল পরীক্ষায় ৪৯ জন অংশগ্রহণ করি। এরমধ্যে ২২ জন ফেল করে। এসব নিয়ে নিয়মিত ক্লাসে না আসা শিক্ষকদের সমালোচনা করে ফেসবুকে কে বা কারা পোস্ট দিয়েছে, কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলে মারধর করা হয়েছে। অথচ আমরা এসবের কিছুই জানি না,' বলেন তিনি।

আলোকবালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাদা কাগজে সই করে ওই ৪ শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে এনেছি। তবে কী অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে তা পুলিশ আমাকে জানায়নি।'

মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদ উল্লাহ বলেন, 'এলাকা থেকে কয়েকজন বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। আমি এসআইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এসআই আমাকে জানিয়েছেন- ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা মেলেনি।'

শিক্ষকের ইন্ধনে পুলিশ যা ঘটিয়েছে তা অযৌক্তিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদ্রাসা সুপার জয়নুল আবেদীন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিক্ষার্থীরা ছাড়পত্র নিতে আমার কাছে এসেছিল। অপেক্ষা করতে বললে তারা বের হয়ে যায়।'

ফেসবুক পোস্টের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'ইভটিজিংয়ের অভিযোগে পুলিশ শিক্ষার্থীদের আটক করেছে। পুলিশ যেন তাদের মারধর না করে এজন্য আমরা প্রতিবাদ করেছি।'

এ বিষয়ে নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, 'সেখানে পুলিশ কাউকে মারধর করেনি। এর আগেও, এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ ওঠেছিল। তারা কেউ মাদ্রাসার বর্তমান শিক্ষার্থী নয়। মাদ্রাসা প্রধান ফোন করলে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করতে ওই মাদ্রাসায় যায়।'

ওসি আরও বলেন, 'যদি সেখানে কাউকে অযথা মারধর করা হয়, তাহলে জড়িত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

এসআই আলিম শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'সেখানে ইভটিজিংয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মাদ্রাসা প্রধানের ফোন পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়েছিল।'

'আমরা তাদের সম্পর্কে খারাপ কিছু পাইনি এবং সন্ধ্যায় তাদের ছেড়ে দিয়েছি,' বলেন এসআই।

নরসিংদী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র বলেন, 'আমরা বিষয়টি অবগত নই। শিক্ষার্থীরা যদি ফেসবুকে লিখেও থাকে, তাহলে শিক্ষকরা শাসন করতে পারেন। কিন্তু পুলিশ দিয়ে মারধরের কোনো তথ্য পেলে অবশ্যই জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

5h ago