খাদ্য মজুতে মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের

মজুতদারির বিষয়ে আরও কঠোর হতে খাদ্য মজুতকারীর মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে মতামত চেয়ে সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে 'খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন ২০২২' এর খসড়া প্রকাশ করেছে।

গতকাল শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন বলেন, 'গত পরশু আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।'

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, সরকার নির্ধারিত সীমার বাইরে খাদ্য মজুত করা বা মজুত সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা লঙ্ঘন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই অপরাধে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে এবং জরিমানাও করা হবে।

তবে কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে আর্থিক সুবিধার জন্য খাদ্য সংরক্ষণ করেননি, তাহলে জরিমানাসহ সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান ২টি আইন একত্রিত করে এই খসড়া আইনটি তৈরি করা হয়েছে।

২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে এই খসড়া আইনটির অনুমোদন দেয় এবং এটি আরও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

খাদ্য সচিব বলেন, খাদ্য মজুতের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এ রয়েছে। 'এটি এখন প্রস্তাবিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।'

কোনো খাদ্যের উৎস উল্লেখ না করে পণ্য বিপণন করা, খাদ্যের প্রাকৃতিক উপাদান আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করে উৎপাদন ও বাজারজাত করা এবং ক্ষতিকর দ্রব্য মেশানোর অপরাধে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করেছে মন্ত্রণালয়।

সরকারি গুদামে আমদানি করা, পুরানো বা পালিশ করা খাদ্য সরবরাহ, গুদাম থেকে অবৈধভাবে খাদ্য বিক্রি করা এবং খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণের বিষয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়ালে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান প্রস্তাব করা রয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, 'এই আইনের অধীন শ্রমিক, কর্মচারী, ঠিকাদার, মিল মালিক, ডিলার বা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য ঊৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন বা এতদ্‌সংক্রান্ত কোনো কর্মসম্পাদনে নিজে বিরত থাকিলে বা সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তিকে তাহার কর্তব্য পালনে বিরত থাকিতে বাধ্য বা প্ররোচিত করিলে বা তাহাদের মধ্যে অসন্তোষ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করিলে, উহা হইবে একটি অপরাধ।'

এই অপারাধে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

বর্তমান আইনে এই অপরাধে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

প্রস্তাবিত খসড়া আইনে সংশ্লিষ্ট আদালতকে পচনশীল খাদ্য সামগ্রীর সামান্য পরিমাণ প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করার এবং বাকিগুলো তাৎক্ষণিকভাবে নিলামে বিক্রি করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। অপচনশীল পণ্য নিলামে আদালত ৪৫ কার্যদিবস সময় পাবেন।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, বিদ্যমান বিশেষ ক্ষমতা আইনে কঠোর শাস্তির বিধান থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ খাদ্যে ভেজাল মিশ্রন করছেন বলে জানান তিনি।

নাজের বলেন, 'আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি, সরকার আইনটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

2h ago