বাবা-মা থাকা ছাত্রদের এতিম দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বাবা-মা থাকা ছাত্রদের এতিম দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
করিমের নেছা সাহেবানী এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা। ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/স্টার

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার করিমের নেছা সাহেবানী এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ভুয়া এতিম ছাত্র দেখিয়ে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ-১৯৬১ অনুযায়ী নিবন্ধন প্রদান এবং পরবর্তীতে নিবন্ধন প্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানাগুলোর শিশুদের প্রতিপালন, চিকিৎসা এবং শিক্ষা প্রদানের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয়, যা ক্যাপিটেশন গ্রান্ট নামে পরিচিত।

একই উপজেলার পদুয়া গ্রামের হারুনুর রশীদ নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তবে করিমের নেছা সাহেবানী এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আবদুল মোদাচ্ছের হোসাইনী মাসুক চিশতী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত বুধবার এতিমের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন হারুনুর রশীদ। এ ছাড়াও, কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরও একই অভিযোগ দেন তিনি।

লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত সৈয়দ আবদুল মোদাচ্ছের হোসাইনী মাসুক চিশতী কবিরহাটের পদুয়া গ্রামের করমবক্স বাজার সংলগ্ন করিমের নেছা সাহেবানী এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার খালেকগঞ্জ বাজার সংলগ্ন শাহ জকিউদ্দিন হোসাইনী এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসার অন্যতম পরিচালক। পারিবারিক সূত্রে দায়িত্ব পেয়ে একক নিয়ন্ত্রণে এ দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন তিনি। কয়েক বছর ধরে মাসুক চিশতীর যোগসাজশে দুটি মাদ্রাসার মধ্যে সমন্বয় করে ক্যাপিটেশন গ্রান্টভুক্ত ভুয়া এতিমের তালিকা তৈরি করা হয়। ওই দুটি মাদ্রাসার গ্রান্টভুক্ত এতিমদের তালিকায় এক ছাত্রের নাম ২ বার ব্যবহার করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন তিনি। দুটি এতিমখানার গ্রান্টভুক্ত এতিমদের তালিকায় দেখা যায় যায়, অনেক ছাত্রের নাম দুটি এতিমখানার তালিকায় আছে। তালিকা দুটিতে ১১৫ জনের বেশি এতিমের নাম রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এতিমখানার ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রকল্পে এতিম ছাত্রদের তালিকা তৈরি, অর্থগ্রহণ ও বণ্টনে মানা হয়নি সরকারি নীতিমালা। মাদ্রাসায় পড়া শিক্ষার্থীদের অনেকের বাবা-মা জীবিত আছেন। তাদেরও গ্রান্ট ক্যাপিটেশন এতিম হিসেবে দেখানো হয়েছে। কাগজে-কলমে দেখানো গ্রান্টভুক্ত এতিম শিক্ষার্থীরা নিজেদের বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসে এবং ভর্তি থেকে শুরু করে সব শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য তারা খরচ বহন করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কবিরহাটের করিমের নেছা সাহেবানী এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসায় কোনো এতিম ছাত্র নেই। এতিমখানার কর্মকর্তারা এতিমের নামে সরকারি অর্থ বরাদ্দ নিয়ে আত্মসাৎ করছেন। তবে এতিমখানা পরিচালকের দাবি, এতিমরা ছুটিতে আছে।

কবিরহাট করিমের নেছা সাহেবানী এতিমখানায় সরেজমিনে ১০ জন ছাত্র থাকতে দেখা গেছে। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বাবা-মা জীবিত আছেন এবং তারা টাকা দিয়ে এতিমখানায় ভর্তি হয়েছে।

শিক্ষার্থী হোসেন (ছদ্মনাম) জানায়, তার বাবা-মা জীবিত আছেন। সে ৫৫০ টাকা দিয়ে এই এতিমখানায় ভর্তি হয়েছে।

এই এতিমখানাটি ২০১৬ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। নিবন্ধন নম্বর ৮৩৫/১৬। এতিমখানায় কাগজে-কলমে ৭৫ জন এতিম শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৫ জন এতিমের জন্য প্রতি মাসে ৯০ হাজার টাকা করে বছরে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সরকারি অনুদান পেয়ে আসছে। সরকারি ভাতা ৪৫ জন পেলেও সরেজমিনে মাদ্রাসায় কোনো এতিম পাওয়া যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে করিমের নেছা সাহেবানী এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আবদুল মোদাচ্ছের হোসাইনী মাসুক চিশতী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, অনেক জায়গায় অসহায়দের প্রত্যয়নপত্র থাকলে এতিম হিসেবে গণ্য করা হয়। তার প্রতিষ্ঠানে এতিম আছে, এতিমের বাইরেও ছাত্র আছে। লুকোচুরি করার কিছুই নেই। এতিমের বাইরে কতজন আছে, এতিমখানায় গেলে তা দেখা যাবে। দুটি এতিমখানায় শতাধিক ছাত্র গ্রান্ট ক্যাপিটেশন ভাতা পাচ্ছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এই দুটি মাদ্রাসার সভাপতি আমি নই। দুটি এতিমখানা, মাদ্রাসা ও মসজিদসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের শাহ মোহাইমেন কমপ্লেক্সের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। আমি শাহ মোহাইমেন কমপ্লেক্সের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। কিছু লোক প্রতিহিংসা থেকে এসব প্রচার করছে।'

এ বিষয়ে কবিরহাট উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এখানে নতুন এসেছি। আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। এর আগের উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তিনি এ বিষয়ে বলতে পারবেন।'

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শরীফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইতোমধ্যে সদর উপজেলায় একটি বেসরকারি এতিমখানার ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগ সত্য হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

কবিরহাটের ইউএনও ফাতিমা সুলতানা লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi migrants workers rights in Malaysia

Migrants in Malaysia: Worker faces deportation after speaking up

Nearly 200 workers then began a strike on Friday, he said, requesting not to be named for fear of backlash.

6h ago