ছিনতাই হওয়া ৯ কোটি টাকা উদ্ধার, মানি প্ল্যান্টের ২ পরিচালকসহ আটক ৭: ডিবি

সকালে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের এটিএম মেশিনে টাকা রিফিল করতে যাওয়ার পথে ওই টাকা ছিনতাই হয়। 
মানি প্ল্যান্ট
বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা মানি প্ল্যান্টের এই গাড়িতে করে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা পরিবহন করা হচ্ছিল। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার উত্তরার তুরাগ এলাকায় গাড়ি থেকে ছিনতাই হওয়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের।

এ ঘটনায় টাকা পরিবহনের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ২ পরিচালকসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে এবং একটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খিলক্ষেত এলাকায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশিদ এ তথ্য জানান। 

এর আগে, সকালে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের এটিএম মেশিনে টাকা রিফিল করতে যাওয়ার পথে ওই টাকা ছিনতাই হয়। 

ডিবি প্রধান বলেন, 'আমরা ৩টি ট্রাঙ্কে থাকা প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করেছি, যদিও আমরা ট্রাঙ্ক খুলিনি। বাকি টাকা উদ্ধারে অভিযান চলছে। আমরা ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত খিলক্ষেত থেকে একটি গাড়িও জব্দ করেছি।'

হারুন অর রশিদ বলেন, 'এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমরা দেখব কেন মানি প্ল্যান্টের কর্মকর্তারা এত সহজে ডাকাতদের টাকা নিতে দিল। দুর্ভাগ্যবশত, মানি প্ল্যান্টের কর্মকর্তারা কোনো অস্ত্র বহন করছিলেন না।'

'আমরা কিছু নাম পেয়েছি। মানি প্ল্যান্টের ২ পরিচালকসহ আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারব,' যোগ করেন তিনি।

সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাইক্রোবাসে ৪টি ট্রাঙ্কে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা নিয়ে ওই নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা মিরপুরে ব্যাংকের অফিস থেকে টাকা নিয়ে সাভার এলাকার দিকে যাওয়ার সময় অস্ত্রসহ কয়েকজন গাড়িটি আটকে বন্দুকের মুখে টাকা ছিনতাই করে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোরশেদ আলম সাংবাদিকদের জানান, গাড়িটি মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে পৌঁছালে একটি কালো মাইক্রোবাসে ৭-৮ জন লোক গাড়ির গতিরোধ করে। গাড়িতে মানি প্ল্যান্টের একজন ম্যানেজার, একজন সুপারভাইজার, দুজন গার্ড ও চালক ছিলেন।

তিনি বলেন, 'গাড়ির দরজা এতটাই হালকা ছিল যে ডাকাতরা তা টেনে খুলে ফেলে এবং চালকসহ ৪ জনকে জোর করে নামিয়ে দেয়। পরে তারা ৪টি ট্রাঙ্ক কালো মাইক্রোবাসে তুলে নেয় এবং পালিয়ে যায়।'

পরে মানি প্ল্যান্টের কর্মকর্তারা ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সাহায্য চায়।

টাকা ছিনতাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এই কালো মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

'ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিতে ভুয়া নম্বরপ্লেট ছিল। অপর একটি প্রাইভেট কারের ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে গাড়িটিকে শনাক্ত করা হয়েছে,' বলেন তিনি।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'ডিএমপির নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই মানি প্ল্যান্ট বিপুল পরিমাণ অর্থ বহন করছিল।'

বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ডিবির একটি দল প্রথমে খিলক্ষেত এলাকায় কালো গাড়িটি দেখতে পেয়ে চালকসহ দুজনকে আটক করে এবং গাড়ি ও ৩টি ট্রাঙ্ক জব্দ করে।

জিজ্ঞাসাবাদে চালক জানিয়েছে যে ছিনতাইকারীরা একটি ট্রাঙ্ক নিয়ে ৩০০ ফিট এলাকায় নেমে যায়। 

মিরপুর ডিবির এডিসি সাইফুল ইসলাম জানান, টঙ্গী এলাকা থেকে মাইক্রোবাসটি ভাড়া করা হয়েছিল।

এদিকে যোগাযোগ করা হলে মানি প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোদা জীবন দেবনাথ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিবি মাত্র ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে। একটি ট্রাঙ্ক খালি পাওয়া গেছে। অপর দুটি ট্রাঙ্কও অর্ধেক খালি ছিল।'

নিরাপত্তার অভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সকালে ৩টি গাড়ি ক্যাশ রিফিলের জন্য বেরিয়েছিল। দ্বিতীয় গাড়িটি দুর্ভাগ্যবশত কারিগরি সমস্যায় পড়ে। তৃতীয় গাড়িতে অস্ত্র ছিল। তারা ওই গাড়ির সঙ্গে থেকে যায়। এ অবস্থায় প্রথম গাড়িটি এগিয়ে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়।'

ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের (ডিবিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এটিএম বুথে টাকা রিফিলের জন্য নগদ টাকা বহনে তার ব্যাংক থার্ড পার্টি সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছে।

আবুল কাশেম আরও বলেন, এতে ব্যাংক এবং মানি প্ল্যান্ট কেউই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। তার কারণ সেটা একটি বিমা কোম্পানি মাধ্যমে বিমা করা ছিল। এতে বিমা কোম্পানি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

Comments