৩ হাজার পান গাছ কাটার ঘটনায় দায়সারা তদন্তের অভিযোগ

বেরেঙ্গা পানপুঞ্জির ৪টি পানজুমের ৩ হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ ওঠে আল্লাদাত চা-বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
পান-সুপারি গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বড়লেখা ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধন। ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার একটি পানপুঞ্জির ৩ হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলার ঘটনার তদন্ত পুলিশ দায়সারাভাবে করেছে বলে অভিযোগ পানপুঞ্জির লোকজনের।

পান-সুপারি গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রোববার বিকেলে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর বাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বড়লেখা ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরাম মানববন্ধনের আয়োজন করে।

ওই ইউনিয়নের বেরেঙ্গা পানপুঞ্জির ৪টি পানজুমের ৩ হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ ওঠে আল্লাদাত চা-বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

চা-বাগানের ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিন, পাহারাদার নূর উদ্দিন ও আব্দুস সামাদের নাম উল্লেখ করে বড়লেখা থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরদিন ৯ মে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ।

পুলিশ ওই ঘটনায় একটি দায়সারা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে বলে অভিযোগ বড়লেখা ইন্ডিজেনিয়াস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ শর্মার।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পান ও সুপারি গাছ কাটার পর আমরা থানায় অভিযোগ দেই। এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পান শাহবাজপুর তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ। কিন্তু তিনি আমাদের অসহযোগিতা করছেন। দায়সারা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।'

'আমাদের প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না,' যোগ করেন তিনি।

মানববন্ধনে ক্ষতিগ্রস্ত পানপুঞ্জির হেডম্যান অলমি পঃতাম বলেন, 'আমরা অসহায় হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছি। বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের পান ও সুপারি গাছ কেটে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। তারা আমাদের হুমকিও দিচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'গত ৮ মে বেরেঙ্গা পুঞ্জির ৪টি পানজুমের ৩ হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় চা বাগানের ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিন, পাহারাদার নূর উদ্দিন ও আব্দুস সামাদের নামোল্লেখ ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে বড়লেখা থানায় লিখিত একটি অভিযোগ আমি নিজেই করি।'

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, 'পুঞ্জির মানুষজন শান্তিপ্রিয়। তাদের জুমের পান ও সুপারি গাছ কাটা চরম অন্যায়। এ রকম ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে একের পর এক ঘটনা বাড়বে।'

তবে আল্লাদাত চা বাগানের ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিন পান-সুপারি গাছ কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। মুঠোফোনে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেরেঙ্গা পানজুমের পান ও সুপারি গাছ কাটার জায়গাটা অনেক দূরের। সে সময় আমাদের চা বাগানে ভিজিট ছিল। আমরা খুবই ব্যস্ত ছিলাম।'

ওই ঘটনায় বাগানের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি তার।

দায়সারা তদন্তের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহবাজপুর তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে অধর্তব্য অপরাধ হয়েছে। তাই দণ্ডবিধির ৪২৭ ও ৫০৬ ধারায় নন এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিলের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়েছি।'

তবে মৌলভীবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি সুবিমল লিন্দকিরি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পান গাছ কাটার ঘটনায় এফআইআর নেওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। কিন্তু মামলা না নিয়ে নন এফআইআর প্রসিকিউশন দাখিলের অনুমতি চাওয়াটা রহস্যজনক।' 

এ প্রসঙ্গে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর হোসাইন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বেশ কিছু পান ও সুপারি গাছ কাটা দেখেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।'

Comments