বাঙলা কলেজে ভাঙচুর: মামলায় বিএনপির ২ মৃত নেতা আসামি

পুলিশ জানিয়েছে, কীভাবে দুই মৃত ব্যক্তি এই মামলায় জড়িত হয়েছেন তারা তা খতিয়ে দেখবে।
শফিকুল ইসলাম ও আবদুল জব্বার। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মিরপুর এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটলে প্রায় প্রতিবারই আবদুল জব্বার হাওলাদার মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন।

তবে পরিবারের দাবি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার দুই বছর পর গত ১৮ জুলাই মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপির ১০৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে করা মামলাতেও তাকে দ্বিতীয় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।

জব্বারের পরিবার জানায়, মিরপুরে একসময় বিএনপিপন্থী একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জব্বার ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

দ্য ডেইলি স্টার তার ডেথ সার্টিফিকেট দেখেছে।

একই মামলায় বাংলা কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম সুমনকে আসামি করা হয়েছে। তিনিও প্রায় নয় মাস আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

মামলার বাদী কলেজের কর্মচারী মহিদুর রহমান বলেন, তিনি পুলিশের কাছে কোনো অভিযুক্তের নাম দেননি।

'আমি শুধু ভাঙচুরের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি কারো নাম দিইনি। পুলিশ তাদের নাম দিয়েছে,' গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন তিনি।

দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আমিনুল বাশার অভিযোগকারীকেই এজন্য দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, 'আমি জানি না তিনি কীভাবে এটা বলতে পারলেন। একজন বাদী হিসেবে তিনি মামলায় স্বাক্ষর করেছেন।'

তিনি বলেন, কীভাবে দুই মৃত ব্যক্তি এই মামলায় জড়িত হয়েছেন তারা তা খতিয়ে দেখবেন।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই বিষয়টি আদালতকে জানিয়েছি।

মানবাধিকার কর্মী নুর খান বলেন, এ ধরনের কাল্পনিক মামলা নতুন কিছু নয়। অতীতে বিশেষ করে নির্বাচনের আগে এ ধরনের মামলায় মৃত ব্যক্তিদের নামও এসেছে।

তিনি গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বিরোধী দলগুলোকে দমন করার জন্য এসব মামলা করা হয়।

গত ১৮ জুলাই মিরপুরে বাংলা কলেজ শাখার বিএনপি ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই মামলায় ১২০০ এর বেশি বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

দারুসসালাম থানায় কলেজের কর্মচারী মহিদুর রহমান একটি মামলা করেন। এ মামলায় কলেজে অবৈধভাবে প্রবেশ ও ভাঙচুরের অভিযোগে ১০৯ জনের নামে এবং অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করা হয়।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে জব্বারের স্ত্রী মর্জিনা বেগম জানান, তার স্বামী ২০১৯ সালে পাকস্থলীতে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর রাজনীতি থেকে সরে আসেন। এর আগে তিনি বিএনপির শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

'বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে, শুধুমাত্র তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তার স্বামী ২০-৩০টি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন,' বলেন মর্জিনা।

একসময় গাবতলী ও সদরঘাটের মধ্যে একটি বাস চলত এই পরিবারের। জব্বারের চিকিৎসা ও মামলার আইনি খরচ বহন করতে তাদের বাসটি বিক্রি করতে হয়েছে।

তাদের মেয়ে, একটি স্কুলের শিক্ষক এখন তাদের পরিবারের খরচ চালান।

'আমাদের এখনো ১২ লাখ টাকা ঋণ আছে। যখন আমার মৃত স্বামীকেও মামলার আসামি করা হয় তখন আমাদের অবস্থাটা কেমন আপনারা বুঝতে পারছেন,' বলেন মর্জিনা।

মামলার ৭৩ নম্বর আসামি সুমন ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর মারা যান বলে তার ভাই তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।

সুমনের চাচাতো ভাই শাসমুল হুদা সোহাগ বলেন, ২০১৮ সালে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর সুমন নিজেকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে নেয়, কিন্তু মৃত্যুর প্রায় এক মাস আগে তাকে বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি করা হয়।'

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভুতুরে মামলা বেড়ে যায় বলে জানান নেতাকর্মীরা। মামলার তালিকা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে তখন বিএনপি জানিয়েছিল, তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চার হাজারের বেশি মামলা রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল এবারও একই কৌশল অবলম্বন করছে।

তিনি বলেন, 'এটি তাদের নির্বাচনী কারচুপি প্রকল্পের অংশ। তাদের কোনো জনসমর্থন নেই। তারা দুর্নীতিবাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে।'

গণমাধ্যমে আসা খবরে বলা হয়, গত দুই মাসে তিন শতাধিক মামলা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

Comments