নারায়ণগঞ্জ

ধারালো অস্ত্র নিয়ে হঠাৎ একদল তরুণের হামলা-ভাঙচুর, ধন্দে পুলিশ

‘রেস্তোরাঁর বাইরে দাঁড়ানো একজন পুলিশ অফিসার নিজের পরিচয় দিয়ে হামলাকারীদের চলে যেতে বললে তার হাতে কোপ দেওয়া হয়। বুকেও আঘাত করা হয়। রাস্তাতেও কয়েকজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে হামলাকারীরা। পরে সামনে এগিয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করে তারা।’
নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকায় রেস্তোরাঁয় ভাঙচুর চালায় একদল তরুণ। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকায় অর্ধশত তরুণের একটি দল লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে। শনিবার রাত ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার একদিন পরও পুলিশ তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। হামলার কারণ সম্পর্কেও সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারছেন না তারা।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একদল কিশোর ও তরুণ ধারালো অস্ত্র, বাঁশ ও লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিয়ে ভাঙচুর চালায়। এই সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা, একজন রিকশাচালকসহ অন্তত ১২ জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে তারা।

তবে রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং হামলাকারীদের কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ। ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম জানান, হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, রাত ৯টার দিকে প্রায় অর্ধশত কিশোর ও তরুণের একটি দল হামলা চালায়। মাসদাইরের ঈদগাহ রোড দিয়ে তারা প্রবেশ করে বেগম রোকেয়া খন্দকার পৌর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত অস্ত্র হাতে মহড়া দেয়। তারা রাস্তার পাশের একটি রেস্তোরাঁ, মুদির দোকান ও বাসাবাড়ির জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে। পরে মাসদাইরের স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়ে ঢুকেও ভাঙচুর চালায় হামলাকারীরা।

সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়া অস্ত্র হাতে তরুণদের মহড়ার দৃশ্য

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মাসদাইর ও আশেপাশের এলাকায় ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে সাব্বির ও নেছার নামে দুই ব্যক্তির নেতৃত্বাধীন দুটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত ৮টার দিকে সাব্বিরকে মারধর করে নেছারের লোকজন। এরপরই সাব্বিরের লোকজন তাণ্ডব চালায়। এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরায় ঘটনাটি ধরা পড়েছে।

সড়কে হামলাকারীদের কয়েকজনকে কোপাতে এবং বাঁশ ও লাঠিসোটা দিয়ে পেটাতে দেখা যায়। হামলাকারীরা 'বেক এন বিনস' নামে একটি রেস্তোরাঁয় ঢুকেও ভাঙচুর চালায়।

ক্ষতিগ্রস্ত রেস্তোরাঁর মালিক জোবায়েদ আহমেদ সোহাগ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হঠাৎ ধারালো অস্ত্র নিয়ে লোকজন আমার রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ে। ওই সময় ভেতরে ক্রেতা ও আমার কিছু অতিথি ছিলেন। হামলাকারীরা রেস্তোরাঁয় অতর্কিত ভাঙচুর শুরু করে। তখন ভেতরের সবাই টেবিল উল্টো করে পেছনে গিয়ে নিজেদের রক্ষা করি। কেউ সামনে এগোলে কুপিয়ে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয় হামলাকারীরা। এ সময় রেস্তোরাঁর ক্রেতা ও কর্মচারীদের কয়েকজনের শরীরে ভাঙা কাঁচের আঘাত লেগেছে।'

'রেস্তোরাঁর বাইরে দাঁড়ানো একজন পুলিশ অফিসার নিজের পরিচয় দিয়ে হামলাকারীদের চলে যেতে বললে তার হাতে কোপ দেওয়া হয়। বুকেও আঘাত করা হয়। রাস্তাতেও কয়েকজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে হামলাকারীরা। পরে সামনে এগিয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করে তারা।'

জোবায়েদ বলেন, হামলাকারীদের কাউকেই তিনি চেনেন না। তিনি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাসদাইরে আওয়ামী লীগের কোনো কার্যালয় আছে বলে আমার জানা নেই। স্থানীয়ভাবে কেউ হয়তো কার্যালয় করেছেন। সেখানে হামলা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে আমাকে কেউ জানায়নি।'

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি নূরে আযম বলেন, 'শনিবার রাতের হামলার ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মারুফ হাসানসহ ৩ জনকে কোপানো হয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। মারুফ পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি পুলিশ লাইনসে কাজ শেষে ওই রেস্তোরাঁর সামনে গিয়েছিলেন। তখন তিনি হামলাকারীদের কবলে পড়েন। আহত আরেকজন রিকশাচালক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অন্যজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আরও কয়েকজনকে পেটানো হয়েছে বলে জেনেছি।'

এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে জানিয়ে ওসি বলেন, 'ঠিক কী কারণে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করেছি, কেউই কোনো কথা বলছেন না। আমরা কিছু সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি। ফুটেজ পর্যালোচনা করে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।'

Comments