নাটোরে জালিয়াতির অভিযোগে আইনজীবীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতের মামলা

মানচিত্রে নাটোর
মানচিত্রে নাটোর। স্টার ফাইল ফটো

জাল ডকুমেন্ট তৈরি করে আদালতে পেশ করার দায়ে নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবী মো. সাইদুল ইসলামসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন সিংড়া আমলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদ।

আসামিরা হলেন, সিংড়া উপজেলার বড়বড়ীয়া গ্রামের মো. মুনির উদ্দিন ফকির ফকিরের ছেলে মো. কামরুজ্জামান, একই গ্রামের মো. মমতাজ ফকিরের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৩), সিংড়ার স্ট্যাম্প ভেন্ডর মো. মোনায়েম ও নাটোর শহরের বড় হরিশপুর এলাকার বাসিন্দা ও নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. সাইদুল ইসলাম (সাঈদ)।

সিংড়া আমলী আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রাজু আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, 'নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবীসহ আসামিগণ পরস্পর যোগসাজসের মাধ্যমে জাল ডকুমেন্ট তৈরি করে খাঁটি হিসেবে দাখিল করেছেন।'

ওই মামলায় দরখাস্তকারী মো. মামুন সোনার একটি নালিশী দরখাস্ত দাখিল করে বলেন, 'আসামি মো. কামরুজ্জামান, মোছা. তুহিনা খাতুন ও মো. জাহাঙ্গীর আলম তার কাছ থেকে জমি কিনে রেজিস্ট্রি করে নিয়ে ৮ লাখ টাকা বাকি রাখেন এবং ৩০০ টাকা মূলের ৩টি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে ৩ মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধের চুক্তিনামা সম্পাদন করে দেয়। এ ছাড়া ৩ মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করার অঙ্গীকার করেন। পরে সেই টাকা পরিশোধ না করলে মামুন সোনার আসামিদের বিরুদ্ধে সিংড়া আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন।'

এরপর আসামিরা গত ২২ জানুয়ারি পরস্পর যোগসাজসে ১০০ টাকা মূল্যের ৩টি স্ট্যাম্পে মামুন সোনারের স্বাক্ষর জাল করে এবং তাদের দলিল থেকে তার ছবি সংগ্রহ করে নাটোর নোটারি পাবলিকের কাছে জাল আপসনামা তৈরি করে সিংড়া আমলী আদালতে জমা দিলে আসামিরা জামিনের আদেশপ্রাপ্ত হন।

পরে মামুন সোনার আদালতে এসে নালিশ করেন, তিনি কোনো আপসনামা করেননি। আসামিরা তার সই জাল করে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করে জামিন নিয়েছে।

আসামি মো. কামরুজ্জামান সম্পাদিক এফিডেভিটে উল্লেখ করেন, গত ৮ জুলাই দরখাস্তকারী মামুন সোনার আসামি মো. কামরুজ্জামান ও তুহিনা খাতুন বরাবর ২টি দলিল সম্পাদন করে দিয়েছে। ওই দলিল সংক্রান্ত লেনদেনের অবশিষ্ট ৮ লাখ টাকা দরখাস্তকারী মামুন সোনার বুঝে পেয়েছে মর্মে দরখাস্তকারী মামুন সোনার ঘোষণা করেছেন। 

আদালতের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এটা প্রতীয়মান হয় যে, আসামি মো. কামরুজ্জামান ও মো. জাহাঙ্গীর আলম পরস্পর যোগসাজসের মাধ্যমে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বাদীর অনুরুপ স্বাক্ষর জাল করে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে একটি এফিডেভিট সম্পাদন করে।

উক্ত এফিডেভিটে ঘোষণাকারী প্রথম পক্ষ কামরুজ্জামান ও মামুন সোনারকে শনাক্ত করেন নাটোর জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. সাইদুল ইসলাম।

এ ছাড়া এফিডেভিটে ব্যবহৃত স্ট্যাম্প ৩টিতে সিংড়া থানার স্ট্যাম্প ভেন্ডর মো. মোজাম্মেল হক স্বাক্ষরিত হলেও ট্রেজারিতে তা লিপিবদ্ধ নেই। সিংড়ার স্ট্যাম্প ভেন্ডর মো. মোনায়েম আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ওই স্ট্যাম্প ৩টি সরবরাহ করেন।

সিংড়া আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. রাজু আহমেদ বলেন, 'মামলাটি বিচারের জন্য অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।'

মামুন সোনারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান সৈকত বলেন, 'জালিয়াতি করে আসামি মো. কামরুজ্জামান ও মো. জাহাঙ্গীর আলম পরস্পর যোগসাজসের মাধ্যমে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে মামুনের  অনুরুপ স্বাক্ষর জাল করে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে একটি এফিডেভিট সম্পাদন করে আদালত থেকে জামিন নেয়।'

পরে আমরা বিষয়টি আদালতকে জানালে আদালত তদন্ত করে জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণ পান। পরে আদালত মামলা করেন। আইনজীবীর জালিয়াতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আদালতের কাছে জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় আইনজীবী আসামি হয়েছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
G7 statement on Israel Iran war

Sirens sounded after missiles launched from Iran, says Israeli army

Trump to decide within two weeks on possible military involvement

12h ago