আনসার আল ইসলামের গ্রেপ্তার সদস্যদের কেউ হোমিও চিকিৎসক, কেউ শিক্ষক

গ্রেপ্তার আনসার আল ইসলামের সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নায়েবে আমির মো. সাখাওয়াতুল কবিরসহ তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল ও ১৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন—ইহছানূর রহমান ওরফে মুরাদ ওরফে সাইফ, বখতিয়ার রহমান ওরফে নাজমুল, ইউসুফ আলী সরকার এবং জাহেদুল ইসলাম ওরফে আশ্রাফ।

আজ রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি জানান, আনসার আল ইসলামের প্রতিষ্ঠাকালীন নায়েবে আমির এবং বর্তমান শুরা কমিটির সদস্য সাখাওয়াতুল কবির আনিস ও রফিক নামেও পরিচিত। ২০০২ সালে তিনি তার ভগ্নীপতি এজাজ কারগিলের তত্ত্বাবধানে 'জামায়াতুল মুসলিমিন' নামে একটি সংগঠনে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। তখন থেকে সেই সময়কার আলোচিত জঙ্গি তেহজিব করিম, শামিম, তারিক সোহেল ও শামীম মাহফুজসহ অনেকের সঙ্গে তার যোগাযোগ বাড়তে থাকে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে আনসার আল ইসলামের প্রথম আমির হন এজাজ কারগিল। সেই সময়েই সাখাওয়াতুল কবির আনসার আল ইসলামের বাংলাদেশের নায়েবে আমির হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে এজাজ কারগিল পাকিস্তানে চলে যান। একই বছর সাখাওয়াতুল কবির এজাজ কারগিলের মাকে নিয়ে পাকিস্তানে চলে যান।

আসাদুজ্জামানের ভাষ্য, ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এজাজ কারগিল নিহত হলে শাখাওয়াতুল কবির দেশে পালিয়ে আসেন। দেশে ফিরে পুনরায় তিনি আনসার আল ইসলামের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। ২০১৫ সালে গ্রেপ্তারের পর জেলখানাতেও তার সাংগঠনিক কার্যক্রম বজায় রাখেন তিনি।

২০১৮ সালে সাখাওয়াতুল কবির জামিনে মুক্তি পান। ২০১৯ সালে আনসার আল ইসলামের শুরা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এ সময়েই জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া নামে একটি সংগঠন পাহাড়ে তাদের অবস্থান জানান দেয়। এই নতুন সংগঠনের মূল সংগঠক ছিল শামীম মাহফুজ। শামীম মাহফুজের সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে সাখাওয়াতুল কবিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। সাখাওয়াতুল কবির জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার তত্ত্বাবধানে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে শামীম মাহফুজের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠক করেন। এছাড়া আনসার আল ইসলাম শামীম মাহফুজকে মাসিক ভিত্তিতে যে টাকা দিত, তার দায়িত্ব ছিল সাখাওয়াতুল কবিরের।

সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আনসার আল ইসলামের ঢাকা অঞ্চলের আসকারি তথা সামরিক প্রধান ইহছানূর রহমান। তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ২০২০ সালে বিএসসি পাশ করেন। ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আনসার আল ইসলামের সদস্য হন। তারপর সংগঠনের বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে তিনি ঢাকা অঞ্চলের আসকারি তথা সামরিক প্রধান হন।

গ্রেপ্তার আরেক সদস্য বখতিয়ার রহমান মূলত একজন হোমিও চিকিৎসক বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, তিনি তার বাসায় আনসার আল ইসলামের পলাতক সদস্যদের আশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা করতেন।

এ ছাড়া গ্রেপ্তার ইউসুফ সম্পর্কে বলা হয়, তিনি আনসার আল ইসলামের গাজীপুর অঞ্চলের দাওয়া শাখার প্রধান। আর সাভার অঞ্চলের একটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাহেদুল ইসলামও পেশায় একজন হোমিও চিকিৎসক। তিনি সম্প্রতি আরামবাগ হাইস্কুল এন্ড কলেজে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt secretly backing wrongdoers?

BNP acting chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of Lal Chand, alias Sohag, due to its silent support for such incidents of mob violence.

2h ago