মাদক মামলায় গ্রেপ্তার পুলিশের এএসআই

পুলিশের বিশেষ শাখার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আজহার আলীকে ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এক সদস্যকে সাড়ে ৪ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধারসংক্রান্ত এক মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।

গত শনিবার ঢাকার মালিবাগ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিনই তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে ডিএনসি। তবে এখনো রিমান্ড শুনানি হয়নি, আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।

মামলার নথি ও আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই এসবি সদস্যের নাম আজহার আলী (৩৮)। তিনি এসবির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)। শুক্রবার সকালে মোহাম্মদপুরের একটি ভবনের ছাদে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসপিবিএনের ৩ সদস্যের কাছে একটি ব্যাগ রেখে যান আজহার।

তিনি গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে ব্যাগটি রেখে গিয়েছিলেন। ডিএনসির সদস্যরা ওই ব্যাগ তল্লাশি করে সাড়ে ৪ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেন।

এ ঘটনায় শুক্রবার ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় আজহার এবং কক্সবাজারের বাসিন্দা চানুচিং চাকমাকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করে ডিএনসি। পরদিন শনিবার মালিবাগের ফরচুন শপিং মলের সামনে থেকে আজহার আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানতে চাইলে ডিএনসির ঢাকা উত্তর অঞ্চলের উপপরিচালক রাশেদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটি মাদক মামলায় পলাতক হিসেবে আসামি তাকে করা হয়েছিল। আমরা জানতাম না তিনি পুলিশের কেউ। তাকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, তিনি এসবির সদস্য। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। এখনো রিমান্ড শুনানি হয়নি।'

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, শুক্রবার ভোরে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে ঢাকার আবদুল্লাহপুর হয়ে মোহাম্মদপুরে একটি মাদকের চালান আসে। ওই চালান নিয়ে আসেন চানুচিং চাকমা (২৬) ও তার সহযোগী এক নারী। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে চানুচিং চাকমাকে সেদিন সকাল পৌনে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরের আসাদগেট থেকে আটক করা হয়। তার কাছে কোনো ইয়াবা পাওয়া যায়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, চানুচিংয়ের সঙ্গে আসা ওই নারী চালানটি আজহার আলীর কাছে একটি পরিবহনের কাউন্টারে হস্তান্তর করবেন। ওই কাউন্টারে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ডিএনসির কর্মকর্তারা ওই কাউন্টারে পৌঁছান সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায়, ইয়াবার চালানটি ওই নারী আজহার আলীর কাছে হস্তান্তর করেছেন। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আজহার আলী সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে কালো রঙের একটি ট্রাভেল ব্যাগ (ভ্রমণের সময় ব্যবহৃত ব্যাগ) নিয়ে মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব সড়কের একটি ভবনে প্রবেশ করেন। ৭ মিনিট পর ১০টা ৩০ মিনিটে তিনি ব্যাগ ছাড়াই ওই ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৬ তলা ওই ভবনের ছাদে তখন এসপিবিএনের ৩ সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজহার আলী গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে একটি ট্রাভেল ব্যাগ রেখে চলে যান। আজহার আলীর পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়, তিনি একটি সরকারি সংস্থায় কর্মরত। ব্যাগটি তল্লাশি করে সাড়ে ৪ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজহার আলী মাদকের কারবারে জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গণভবনের একটি ফটকে নিরাপত্তা পাস দেওয়াসংক্রান্ত কার্যক্রমের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাকে এসবির কার্যালয়ে নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদও করেন। ইয়াবা উদ্ধারের এক দিন পর ডিএনসির কর্মকর্তারা তাকে হেফাজতে নিয়ে আদালতে পাঠান।

ডিএনসির ঢাকা উত্তর অঞ্চলের উপপরিচালক রাশেদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উনি বলছেন এক নারী তাকে একটি ব্যাগ দিয়ে যান। সেটা তিনি রেখেছিলেন। ব্যাগের ভেতরে কী আছে তা তিনি জানতেন না। আমরা ওই নারীকে খুঁজছি। আগামীকাল রিমান্ড শুনানির পর আজহার আলীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English
enforced disappearance in Bangladesh

Enforced disappearance: Anti-terror law abused most to frame victims

The fallen Sheikh Hasina government abused the Anti-Terrorism Act, 2009 the most to prosecute victims of enforced disappearance, found the commission investigating enforced disappearances.

9h ago