চট্টগ্রামে মার্কেট দখলে নিতে ভাঙচুর-লুটপাট, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং বর্তমানে তদন্ত চলছে।
মার্কেট দখল
হাজারীগলি এলাকায় দোতলা মার্কেটটি দখলে নিতে গত ১ ডিসেম্বর হামলা চালায় ৫০-৬০ জনের একটি দল। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানাধীন হাজারীগলি এলাকায় জমিসহ দোতলা একটি মার্কেট দখলে নিতে ভাংচুর-লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। 

এ ঘটনায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভাঙচুরের সময় খবর দেওয়ার পরও পুলিশ সময়মতো না আসায় মালামাল লুট এবং আসামিরা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় করা মামলার এজাহার থেকে এক আসামির নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

তবে পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং বর্তমানে তদন্ত চলছে।

গত ১ ডিসেম্বর হাজারীগলির খাজা মার্কেট দখলকে কেন্দ্র করে ওই লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলের দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই কোতয়ালী থানা। পাশেই বক্সিরহাট পুলিশ ফাঁড়ি। 

পুলিশ বলছে, খাজা মার্কেট ও সংলগ্ন জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা চলছে আদালতে। মার্কেটের নিচতলায় ওষুধের দোকান এবং দ্বিতীয় তলায় জায়গার দখলদার শাবিদারা বেগমের (৫৬) বাসা ও গুদাম।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, জমি নিয়ে মামলার রায় তাদের পক্ষে আসলেও, হঠাৎ ১ ডিসেম্বর ৫০-৬০ জন এসে তাদের ওপর হামলা ও ভাঙচুর চালায় এবং মারধর করে। 
ঘটনার সময় পুলিশ আসেনি। তবে, ৯৯৯ নম্বরে কল করলে এবং থানায় জানানো হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

শাবিদারা বেগমের ছেলে ফরমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার সৎ বোনরা মার্কেটের জায়গা নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিচ্ছিলেন। পরে আমার বাবাকে জীবিত দেখিয়ে ২০০৭ সালে আদালতে আমার বোনরা মামলা করেন। পরে তারা আদালত থেকে ডিক্রি আনেন তাদের পক্ষে।'

'এসব জানার পর আমরাও মামলা করি। পরে একপর্যায়ে হাজারীগলির ব্যবসায়ী ঝন্টু চৌধুরী ও আফসারুল হকের কাছে আমার বোনরা জায়গার কাগজ বিক্রি করে দিলে, তারা আমাদের উচ্ছেদে ২০২১ সালে হামলা চালায়,' বলেন ফরমান।

তিনি আরও বলেন, 'ঝন্টু চৌধুরী স্থানীয় কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীর ঘনিষ্ট হিসাবে পরিচিত এবং কাউন্সিলরের ভবনেই ভাড়া থাকেন। মামলা চলাকালে আফসারুল হক বায়না করেন ঝন্টু চৌধুরীর সঙ্গে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত ৫ নভেম্বর আদালত আমাদের পক্ষে রায় দেন। ১ ডিসেম্বর ঝন্টু দলবলসহ ৫০-৬০ জন আমাদের এখানে এসে অতর্কিত হামলা চালায় এবং ভাঙচুর করে। তারা মার্কেটের সিসিটিভি খুলে ফেলে ও আমার ভাইকে আহত করে জিনিসপত্র ও ঘর থেকে স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।'

ফরমান জানান, ঘটনার সময় তারা প্রথমে ৯৯৯ ফোন দেন ও পরে থানায় যান। পুলিশ তারপর ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু ততক্ষণে ভাঙচুর ও লুটপাট করে আসামিরা চলে যায়। 
পরে বক্সিরহাটের একটি টহল টিম ৪ জনকে এবং স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে ২ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

অভিযোগ করে ফরমান বলেন, 'পরে আমরা ঝন্টু চৌধুরী ও আফসারুল হককে আসামি করে মামলার এজাহার দেই। কিন্তু রাত ১টা পর্যন্ত আমাদের থানায় বসিয়ে রেখে দফায় দফায় এজাহারে বিভিন্ন তথ্য যোগ-বিয়োগ করা হয়। রাতে আমার মায়ের থেকে এজাহারে সই নেওয়া হলেও, মামলার কপি দেওয়া হয়নি।'

'সকালে মাকে নিয়ে থানায় যেতে বলে পুলিশ। যাওয়ার পর আবার মাকে নতুন করে সই করতে হয়। তখনও আমাদের এজাহার ভালোভাবে দেখতে দেয়নি পুলিশ। বিকেলে এজাহারের কপি দিলে, দেখতে পাই সেখানে এক আসামির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে ও আইনের অনেক ধারা সংযোজন করা হয়েছে, যেগুলো আমরা করিনি,' বলেন ফরমান।

ফরমানের দাবি, তিনি দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন যে ওসি এস এম ওবায়েদুলের নির্দেশে এগুলো করা হয়েছে।

থানা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন পুলিশ দেরি করে ঘটনাস্থলে গিয়েছে। কোতোয়ালী থানার একাধিক কর্মকর্তা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তারা বলছেন, ২০২১ সাল থেকে জায়গাটি দখল নিতে চাইছিল একটি চক্র। প্রভাবশালীদের দিয়ে তদবিরও করানো হয়েছিল। 

৫ নভেম্বর কোতোয়ালী থানার সাবেক ওসি জাহিদুল কবির নগরীর চান্দগাও থানায় চলে যান। তার বদলে দায়িত্ব পান নতুন ওসি ওবায়েদুল।

দেরিতে গিয়ে কাউকে সুবিধা দেওয়া কিংবা মামলার এজাহার পরিবর্তনের তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন ওসি এস এম ওবায়েদুল হক।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। আমরা সংবাদ পেয়েই গিয়েছি এবং ৬ জনকে আটক করেছি। পুলিশের দেরিতে যাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া এজাহারের তথ্যেও গরমিল করার সুযোগ নেই।'

'কারো নাম যদি প্রমাণ সাপেক্ষে তদন্তে আসে তাহলে তা নেওয়া হবে। মামলার তদন্ত চলছে,' বলেন তিনি।

তবে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মার্কেট দখল নিতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ তোলা হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে—সেই ঝন্টু চৌধুরী ও আফসারুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Heat stress jeopardises dairy industry

There are around 2.5 crore cows and 13 lakh to 14 lakh farmers in the country. Of the farmers, 3.5 lakh own large farms, according to the Dairy Farm Owners Association in Bangladesh.

1h ago