লিবিয়ায় নির্যাতিত: উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন
মো. রোমেল মিয়াকে মাস দুয়েক আগে লিবিয়ায় ভালো বেতনে ভালো চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল একটি পাচারকারী চক্র।
রোমেলের লিবিয়ায় যাওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রাথমিকভাবে তার কাছে দুই লাখ টাকা চায় চক্রটি। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর ৩৫ বছর বয়সী রোমেলের তখন এলাকায় ছোট একটি মাংসের দোকান ছিল। উন্নত জীবনের আশায় বহুকষ্টে তিনি ওই অর্থ জোগাড় করে গত ৬ মার্চ চক্রের সদস্য রহমত উল্লাহকে দেন।
রোমেলের চাচাত ভাই আব্দুল কাইয়ুম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, রোমেলকে যখন জানানো হয় আর কিছুদের মধ্যে তিনি লিবিয়ার উদ্দেশে রওনা হবেন, তখন আর্থিক সচ্ছলতা আসার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তার পরিবার।
পাচারকারীরা গত ১৪ মার্চ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় রোমেলকে দুবাই নিয়ে যায়। এরপর রোমে এবং অবশেষে কায়রো হয়ে লিবিয়ায়।
এর কয়েকদিনের মধ্যেই রোমেলের পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ হয়।
কাইয়ুম বলেন, 'রহমত আমাকে ফোন করে বলেছে যে রোমেলকে লিবিয়ায় জিম্মি করা হয়েছে এবং আমরা তাদের আরও টাকা না দিলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে না।'
পাচারকারীরা রোমেলের ক্ষতি করতে পারে—এই ভয়ে তার দরিদ্র পরিবার আরও দুই লাখ টাকা জোগাড় করে নরসিংদীর রায়পুরার বাঘরিয়াত গ্রামের রহমতের অ্যাকাউন্টে পাঠায়।
কিন্তু টাকা পাওয়ার পর রহমত রোমেলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
কয়েকদিন পর রহমত রোমেলের বাবা-মা ও চাচাত ভাই কাইয়ুমের কাছে ভিডিও কল করা শুরু করে এবং তাদের দেখায় যে কীভাবে তারা লিবিয়ায় রোমেলকে নির্যাতন করছে। তারা আরও ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
কাইয়ুম বলেন, 'প্রায় প্রতিদিনই তারা রোমেলকে নির্যাতন করত এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে আমাদের তা দেখাতো। সেই ভিডিওগুলোতে দেখা যেত, রোমেলের দুই পাশে দাঁড়িয়ে দুজন লোক তাকে হকি স্টিক ও চাবুক দিয়ে মারতে থাকে, আর রোমেল চিৎকার করতে থাকে।'
এ ঘটনায় কাইয়ুম বাদী হয়ে গত ৬ এপ্রিল রায়পুরা থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করছে নরসিংদীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নরসিংদী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান ডেইলি স্টারকে জানান, তারা মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। তবে পাচারকারীরা লিবিয়ায় থাকায় তদন্তে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, পাচারকারীরা ইতোমধ্যে রোমের হাত ও পায়ের চারটি নখ উপড়ে ফেলেছে।
অপহরণকারীরা রোমেলের স্ত্রীকেও ফোন করে এবং মুক্তিপণ না পেলে রোমেলের হাত কেটে ফেলার হুমকি দেয়। এমনকি তারা মাঝে মাঝে এও বলে যে, নির্যাতনের কারণে রোমেল মারা গেছে।
মামলার এজাহারে কাইয়ুম উল্লেখ করেছেন, তিনি আরও কয়েকজনকে নিয়ে নরসিংদীর রায়পুরায় রহমতের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।
কিন্তু রহমতের ভাই শুক্কুর আলী (২৮), মোবারক (৩২), স্ত্রী ফাতেমা (৩০) ও বাবা বাচ্চু মিস্ত্রিসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজন ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করে।
কাইয়ুম জানান, নয় বছর আগে লিবিয়ায় তার সঙ্গে থাকতেন রহমতের ছোট ভাই মো. আরাফাত। সেখান থেকেই রহমতের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
Comments