স্ক্রু ড্রাইভার ও স্টিলের পাত দিয়ে ২২ দিনে কারাগারের ছাদ ফুটো করেন ৪ ফাঁসির আসামি

যেভাবে পালিয়েছিলেন ফাঁসির ৪ আসামি
কনডেম সেলের ছাদ কেটে কাপড়ের রশি বানিয়ে ছাদ থেকে নেমে আসামিরা পালিয়ে যায়। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় কারাগারের ছাদ ফুটো করতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি ব্যবহার করেন হাতল ভাঙা একটি স্ক্রু ড্রাইভার এবং ভোঁতা একটি স্টিলের পাত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই চার আসামি হলেন-নরসিংদির মাধবদী উপজেলার আমির হামজা ওরফে আমির হোসেন (৪১), কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (৬০), বগুড়া কাহালু উপজেলার জাকারিয়া (৩৪) ও বগুড়া সদরের ফরিদ শেখ (৩০)।

২২ দিনের চেষ্টায় কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে আজ ভোররাতে তারা কারাগার থেকে পালান। তবে এ ঘটনার দেড় ঘণ্টার মধ্যেই কারাগারের ৫০০ মিটার দূর থেকে পুলিশ তাদের আটক করে।

হাতল ভাঙা স্ক্রু ড্রাইভার ও ভোঁতা স্টিলের পাত দিয়ে কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে ৪ কয়েদি। ছবি: সংগৃহীত

ছাদ ফুটো করার পর বুধবার ভোর ৩টার দিকে কাপড় দিয়ে রশি বানিয়ে বেয়ে বেয়ে তারা সেখান দিয়ে বের হয়ে কারাগার থেকে পালান।

আটকের পর পুলিশের তাদের কাছ থেকে একটি হাতল ভাঙা স্ক্রু ড্রাইভার, একটি ছোট স্টিলের পাত এবং কয়েদি ফরিদ শেখের কনভিক্ট হিস্টোরি টিকেট জব্দ করে।

আজ বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কয়েদিরা বলেছে যে তারা গত ২২ দিন ধরে স্ক্রু ড্রাইভার ও স্টিলের পাত দিয়ে ধীরে ধীরে ছাদের একটি অংশ ফুটো করে। 

তবে কার কাছ থেকে এই স্ক্রু ড্রাইভার ও পাত পেয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলেনি আসামিরা।

ঘটনার পরে আজ দুপুরে বগুড়া কারাগার পরিদর্শনে যান অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল সুজাউর রহমান।

কীভাবে ছাদ কাটার সরঞ্জাম কনডেম সেলে গেল জানতে চাইলে সুজাউর রহমান বলেন, 'বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব। এতে কার কী ভূমিকা ছিল সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

কারাগারের নিরাপত্তার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'জেলটি ১৮৩৩ সালে নির্মিত। প্রায় ১৪০ বছর ধরে এখানে কয়েদিদের রাখা হচ্ছে। আজ এই ঘটনা ঘটছে বলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমরা সেটা তদন্ত করে দেখব।'

চার কয়েদির মধ্যে আমির হামজা ও নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামে একই পরিবারের চারজনকে কুপিয়ে হত্যা করেন। সেই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি আদালতে তাদের ফাঁসির রায় ঘোষণা করা হয়।

আর মো. জাকারিয়া বগুড়া কাহালু পৌরসভার মেয়র আব্দুল মান্নানের ছেলে। ২০১২ সালে ১৩ বছরের এক স্কুল শিক্ষার্থীকে অপহরণ ও পরে মুক্তিপণ না পেয়ে ইট ভাটায় পুড়িয়ে মারার অপরাধে ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি তার ফাঁসির রায় হয়। এরপর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। গত বছর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়।

ফরিদ শেখের ফাঁসির আদেশ হয় গত বছর বগুড়া সদর থানার একটি হত্যা মামলায়।

কনডেম সেল থেকে পালানোর পর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বগুড়া সদর ফাঁড়ির সাব-ইন্সপেক্টর খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে পুলিশের পাঁচ সদস্যের একটি দল পলাতক এই ফাঁসির আসামিদের বগুড়া চেলোপাড়া এলাকার চাষি বাজার থেকে আটক করে। 

পরে কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া ছবির সঙ্গে মিলিয়ে তাদের শনাক্ত করা হয়।

বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনুজ্জামান শাহীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জেলের ছাদ ফুটো করে পালানোর ঘটনায় বগুড়া জেলা কারাগারের জেলার মোহাম্মদ ফরিদুর রহমান রুবেল বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় আজ বিকেলে এই চার কয়েদির নামে একটি মামলা করেছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials call off shutdown after govt warning

Officials of the National Board of Revenue have withdrawn their shutdown, following a stern government warning and mounting pressure from the country’s top business leaders.

1h ago