‘নিজের মুখের দিকে তাকানোর সাহস পাই না আর’

তাসনিম সারাহ প্রিয়া। ছবি: সংগৃহীত

গত ১০ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা তাসনিম সারাহ প্রিয়া (২৭) তাদের ভাড়া বাসায় নামাজ পড়ছিলেন।

হঠাৎই পাশের ঘর থেকে একটা শব্দ পান তিনি। আর ঠিক তখনই তার ওপর ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে।

'খুব দ্রুত ঘরে ঢুকেই আমার স্বামী আমার মুখে ছুরি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে। আমি প্রাণপন চেষ্টা করতে থাকি নিজেকে বাঁচাতে। কিন্তু সে আমার মুখে ছুরি চালাতেই থাকে,' দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন প্রিয়া।

ভয়াবহ এই হামলার পর প্রিয়াকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে টানা ২০ দিন গুরুতর আঘাত নিয়ে চিকিৎসা নেন প্রিয়া।

হাসপাতাল থেকে ফিরে বর্তমানে উত্তরায় মায়ের সঙ্গে থাকছেন তিনি।

এ ঘটনায় গত ২২ মে প্রিয়া তার স্বামী মোহাম্মদ রনি ও তার তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেন।

নৃশংস ওই হামলায় স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় প্রিয়াকে।

'নিজের মুখের দিকে তাকানোর সাহস পাই না আর। প্রতিটা ক্ষত আমাকে তীব্র যন্ত্রণা দেয়। ওই হামলার পর থেকে আমি রাতে ঘুমাতে পারি না,' কান্নায় ভেঙে পড়ে কথাগুলো বলেন প্রিয়া।

ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ১২টি দোকানের মালিক ব্যবসায়ী রনি ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রিয়াকে বিয়ে করেন। তাদের একটি সন্তান আছে।

তবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে প্রিয়ার বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি।

প্রিয়া বলেন, 'গত কয়েক মাস আমার স্বামী আমাকে ফেসবুক ব্যবহার করতে দেয়নি এমনকি বাড়ি থেকেও বের হতে দেয়নি।'

অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রিয়া বিবাহবিচ্ছেদ চেয়েছিল, যা তার স্বামী রনিকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে।

'নির্যাতন আর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমি ডিভোর্সের কথা বললে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং আমাকে মারধর করে, অপমান করে। একদিন আমার মায়ের বাড়িতে এসে আমার মুখের ওপর ছুরি চালায়,' বলেন প্রিয়া।

মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তার স্বামী হুমকি দেন বলেও জানান তিনি।  

'গত মঙ্গলবার রাতে রনি আমার বাড়িতে এসে আমাকে মেরে ফেলার কথা বলে চিৎকার করতে থাকে। নিজের জীবন বাঁচাতে আমার মুখের একটা ছবি পোস্ট করি, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়,' বলেন প্রিয়া।

'আমি নিরাপত্তা চাই। আমি আমার নিরাপত্তার জন্য ফেসবুকে আমার ওপর আঘাতের ছবি শেয়ার করেছি,' তিনি বলেন।

উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন রনিকে বর্তমানে হাইকোর্ট থেকে জামিনে থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

ফেসবুক লাইভে এসে নিজের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করেন রনি।

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

13h ago