হত্যাচেষ্টা মামলা: জেড আই খান পান্নাকে চেনেন না বাদী

জেড আই খান পান্না। ছবি: প্রথম আলো থেকে নেওয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে আদালতে যাওয়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে যে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে, সেই মামলার বাদী মোহাম্মদ বাকের (৫২) আসামিকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন।

বাকের বনশ্রী এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন। গত ১৭ অক্টোবর তিনি তার ছেলে আহাদুল ইসলামকে (২৫) গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর বনশ্রী থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

গতকাল রোববার বাকের জানান, তিনি জেড আই খান পান্নাকে চেনেন না এবং কীভাবে তার নাম আসামির তালিকায় এসেছে সেটাও জানেন না।

বাকের মোবাইলে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জসিম নামে একজন আইনজীবী এবং আরও কয়েকজন এই তালিকা তৈরি করেছেন। আমি কেবল এফআইআরে সই করেছি।'

বাকেরের ভাষ্য, তিনি তার ছেলের জন্য ন্যায়বিচার চান। তাই মামলা দায়েরের জন্য তিনি তাদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন।

বাকের আরও জানান, আইনজীবী জসিমের বিস্তারিত তথ্য তার কাছে নেই। পরে বনশ্রীর মেরাদিয়া এলাকায় ঘুরে অনেকের সঙ্গে কথা বলেও জসিমের সম্পর্কে জানা যায়নি।

জেড আই খান পান্না মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন । তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী নানা আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করার আদেশ চেয়ে গত ২৯ জুলাই আইনজীবীদের একটি দল হাইকোর্টে আবেদন করে। ওই আবেদনের পক্ষে আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থান করেন জেড আই খান পান্না। শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ২৯ জুলাই নাগরিক উদ্যোগে গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের সদস্যও ছিলেন তিনি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯ জুলাই বিকেলে আহাদুল ইসলামসহ অন্যরা মেরাদিয়া বাজারের সামনে অবস্থান করছিলেন, তখন  আসামিদের অনেকেই অজ্ঞাতনামা বিজিবি, পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অন্য কয়েকজন আসামির নির্দেশে গুলি চালায়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আহাদুলসহ অন্যরা মেরাদিয়া বাজারের কাছে বিক্ষোভ করছিলেন। তখন নাম না জানা বিজিবি, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অন্য আসামিদের নির্দেশে গুলি চালায়। এ সময় আহাদুল গুলিবিদ্ধ হন। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে থাকা আসামিরা তাকে মারধরও করে।

মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন- সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের; সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাউদ হোসেন বলেন, অভিযোগের সত্যতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের 'নতুন শুরুর' বক্তব্য, ৭ মার্চসহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দিবস বাতিলসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করেন পান্না। অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সারাদেশে হত্যা মামলা দায়েরের সমালোচনাও করেন তিনি।

গতকাল জেড আই খান পান্না তার বিরুদ্ধে এই মামলা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, একজন আইনজীবী হিসাবে তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু 'ভুলের' সরাসরি সমালোচনায় অনেকেই আহত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার ভাষ্য, এই সমালোচনা তারা সহ্য করতে পারেনি।

পরে ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথোপকথনে পান্না বলেন, এই 'মিথ্যা মামলা' সম্পর্কে তার কিছু বলার নেই।

তিনি আরও বলেন, 'আমি কাউকে মিথ্যা মামলায় জড়াতে দেখতে চাই না।'

পান্না বলেন, শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করার আগে থেকেই তিনি সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেন, '৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের শাসনের অবসান পর্যন্ত আমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তাহলে শেখ হাসিনার নির্দেশে আমি কেন এমন কাজ (১৯ জুলাইয়ের শুটিংয়ে জড়িত থাকার মতো) করব?'

তিনি এই মামলায় তাকে যুক্ত করার বিষয়টিকে ঘটনার পেছনে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার একটি অশুভ প্রচেষ্টা হিসাবে দেখছেন।

এ মামলায় তিনি আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন বলেও জানান এই আইনজীবী। আজ সোমবার এই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা আছে।

এদিকে জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

গতকাল রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত হিসেবেও অভিহিত করেছে সংগঠনটি।

মামলাটিকে 'মিথ্যা ও হয়রানিমূলক' অভিহিত করে আসকের বার্তায় বলা হয়, জেড আই খান পান্না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত দাবি এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে আটকের ঘটনায় আইনি লড়াইয়ে সম্পৃক্ত থেকেছেন। তার নীতি এবং আদর্শের জায়গায় তিনি সরব ছিলেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র মনে করে, মানবাধিকার বিষয়ে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট-সংশ্লিষ্ট আলোচনা, মতামত ও বক্তব্য সংক্রান্ত কোনো ভূমিকায় কোনো পক্ষের অসন্তুষ্টি থেকে জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা দায়ের করা হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

3h ago