নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা সাবেক যুবলীগ নেতার, তদন্তের নির্দেশ আদালতের

ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। ছবি: সংগৃহীত

ফেনী সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনীর সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম সরকারসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন সাবেক যুবলীগ নেতা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর শাখাওয়াত হোসেন ভূঁঞা। 

আবেদনে তার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও 'ক্রসফায়ার' এর মাধ্যমে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করা হয়। 

ফেনী সদর উপজেলা আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইয়েদ মো. শাফায়াত গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট প্রদানের আদেশ দিয়েছেন। 

মামলার বাদী গত ১৮ নভেম্বর ফেনীর আমলী আদালতে তার অভিযোগ দায়ের করেন। 

মামলার অপর আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, ফেনী পুলিশের তৎকালীন বিশেষ শাখার (ডিএসবি) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আমিনুল ইসলাম, ফেনী সদর মডেল থানায় সাবেক ওসি আবুল কালাম আজাদ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি (ডিবি) রাশেদ খান চৌধুরী, নিজাম হাজারীর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী পুলিশের এসআই নজরুল ইসলাম, এসআই মাহবুবুর রহমান, ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল আজিজ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ উল্যাহ ও ফেনী পৌর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিটু। 

গত ১৮ নভেম্বর ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগটি দায়ের করা হয়। এতে ২৮ জনের নাম উল্লেখ ও ৩০-৪০ জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত আবেদনের বিষয়ে বাদীর আইনজীবীর বক্তব্যসহ শুনানির পর বিকেলে তদন্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানের আদেশ দেন।

আগামী ২২ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।

বাদী তার আরজিতে অভিযোগ করেন, বাদী ফেনী জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, ফেনী পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারীর একজন সমর্থক ছিলেন। ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী চট্টগ্রামে থাকাকালীন সময়ে একটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে রাখা অস্ত্র ও গুলির মামলায় ১০ বছর ও ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে চট্টগ্রাম কারাগারে ছিলেন। তিনি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কারাভোগ কম খেটে কারাগার থেকে বেরিয়ে ফেনীতে এসে নানা কূট-কৌশলে প্রথমে ফেনী পৌরসভার মেয়র এবং পরে ফেনী-২ আসনে বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাদী নিজাম উদ্দিন হাজারীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তিনি কারাগারে সাজা কম খেটে জালিয়াতির মাধ্যমে বের হয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। এতে নিজাম হাজারী তার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে গুম-খুনের পরিকল্পনা করেন। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ বাদী তার ফেনীর মধুপুর গ্রামের বাড়িতে গেলে সন্ত্রাসীরা তার বাড়ি ঘেরাও করে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর চালায়। পরে সেখান থেকে তাকে (বাদী) আটক করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এসয় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তার বৃদ্ধ মাকেও শারীরিকভাবে মারধর করে। এসময় ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর,আলমারিতে থাকা স্বর্ণালংকার ও নগদ এক লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে ধরে চোখ বেঁধে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও এলোপাতাড়ি পেটানোর পর তাকে রাতে ফেনী মডেল থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, থানায় নেওয়ার পর এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের নির্দেশে এএসপি আমিনুল ইসলাম পুনরায় তাকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। তাকে পেটানোর এ দৃশ্য এসআই নজরুল ইসলাম ভিডিও কলে নিজাম হাজারীকে লাইভ দেখান। পরবর্তীতে নিজাম হাজারীর নির্দেশনা অনুযায়ী এএসপি আমিনুল ইসলাম, ওসি আবুল কালাম আজাদ ও ডিবির ওসি রাশেদ খান চৌধুরীর নেতৃত্বে শাখাওয়াতকে (বাদী) চোখ বেঁধে ক্রসফায়ারের উদ্দেশ্যে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে এএসপি আমিনুল ইসলামকে ১৫ লাখ দিয়ে বাদী প্রাণে রক্ষা পেলেও তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। সেই সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা গাড়ি পোড়ানোর মামলাসহ তিন মামলায় বাদী শাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন শিমুল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বিচারক আবেদন গ্রহণ করে বাদী ও আইনজীবীর বক্তব্য শুনেছেন। অভিযোগটির বিষয়ে শুনানি শেষে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট প্রদানের জন্য আদেশ দেন ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইয়েদ মো. শাফায়েত। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ২২ জানুয়ারি।
 

Comments

The Daily Star  | English
Domestic violence killing women in Bangladesh

Domestic violence in Bangladesh: When numbers speak of the silence

When we are informed that 133 women have been killed by their husbands in seven months, it is no longer just a number.

7h ago