বান্দরবানে কিশোরী ধর্ষণ: ৪০ হাজার টাকায় মীমাংসার চেষ্টা, শাস্তির দাবি

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাংপাড়ায় এক আদিবাসী প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা সামাজিক বিচারের মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে—এমন অভিযোগ উঠেছে।

সামাজিক বিচারে ধর্ষককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করানোর শাস্তি নির্ধারণ করা হয়। তবে এলাকাবাসী ও অধিকারকর্মীদের ভাষ্য, বিচার ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেই প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী সামাজিক বিচারের আয়োজন করা হয়েছিল।

ধর্ষক ও 'মীমাংসা চেষ্টায়' জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে আজ বুধবার তারা মানববন্ধন করেছেন।

সূত্র জানিয়েছে, গতকাল অভিযুক্ত নির্মাণ শ্রমিক মো. জামাল হোসেনকে জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করানো হয়।

এর আগে পাড়াপ্রধান পাই শৈ খিয়াংসহ আটজন সামাজিক বিচারে এই শাস্তি নির্ধারণ করেন।

বাকিরা হলেন—গ্রাম প্রধান পাই শৈ খিয়াং, পাইগ্য খিয়াং, রতন খিয়াং, থোয়াই অং প্রু খিয়াং, পিতর খিয়াং, শোকক্রা অং খিয়াং, কেরি খিয়াং ও থুইসা খিয়াং।

কমিটি একটি আপসনামাও তৈরি করেছিল।

ভিডিপি কমান্ডার পাইগ্য খিয়াং জানান, ওই কিশোরীর মা ও ভাই মামলা করতে অনিচ্ছুক, সেই কারণে আত্মীয় রতন খিয়াংয়ের অনুরোধে তারা সামাজিক বিচারের উদ্যোগ নেন।

রতন খিয়াং দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, তিনি অনুরোধ করেছিলেন।

তবে গত রাতেই জামালকে আটক করেছে পুলিশ। রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'ওই কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা মামলা না করলে অভিযুক্তকে ৫৪ ধারায় আদালতে তোলা হবে।'

আবুল কালাম আজাদ আরও জানান, জামালের বিরুদ্ধে বান্দরবান সদর থানায় আরও চারটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি ধর্ষণের অভিযোগে মামলা। বাকি তিনটি হলো—চুরি, মারামারি ও মাদক চোরাকারবারির অভিযোগে।

এদিকে আজ বান্দরবান জেলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ধর্ষকের কঠোর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 'সচেতন ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষ' ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে নারী অধিকার নেতা ডনাইপ্রু (নেলী), মানবাধিকারকর্মী অংচমং মারমা, আইনজীবী ও বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

ডনাইপ্রু বলেন, 'ধর্ষকের কোনো জাত নেই, ধর্ম নেই। ধর্ষণের মূল্য ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা আইনের পরিপন্থি। এই ধরনের সামাজিক বিচারের নামে মীমাংসা চুক্তি দেশের আইনের অবমাননা। আমরা দ্রুত অভিযুক্ত ও বিচার কমিটির সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।'

বক্তারা বলেন, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সামাজিক বিচারের নামে যে মীমাংসার প্রচেষ্টা চলছে, তা অনৈতিক ও বেআইনি।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত ও বিচার কমিটির সদস্যদের আইনের আওতায় আনা না হলে তারা কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।

Comments

The Daily Star  | English

Rising gas prices threaten our investment prospects

The previous government not only turned the country into a net importer of energy, but also initiated a process to make it an import-dependent.

7h ago