‘চোর সন্দেহে’ সাভারে যুবককে গাছে বেঁধে ৩ ঘণ্টা নির্যাতন

ঢাকার সাভারে 'চোর সন্দেহে' এক যুবককে গাছে বেঁধে তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করেছেন কয়েকজন যুবক।
আজ শনিবার বিকেল ৫টার দিকে ওই যুবককে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আটক কর হয়। এরপর রাস্তার পাশের একটি মেহগনি গাছে বেঁধে দফায় দফায় মারধর করা হয়।
রাত ৮টার দিকে সাভার মডেল থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের নাম অভিজিৎ দে (৩৪)। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সুলতানপুর এলাকায়। তার বাবার নাম কমল কান্তি দে।
ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন চোর অপবাদ দিয়ে তাকে মারধর শুরু করেন। পরে স্থানীয় যুবকদের হাতে তুলে দেন। ওই ব্যক্তি সন্দেহ করেন, তিনি বাচ্চা চুরি করতে হাসপাতালে ঢুকেছিলেন।
তবে, অভিজিৎ মানসিক ভারসাম্যহীন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। তাদের মতে, অভিজিৎ নিজের নাম-ঠিকানা বলতে পারলেও তার আচরণ স্বাভাবিক মানুষের মতো না।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশেপাশের চা দোকানিদের ভাষ্য, অনেক দিন থেকে থানার পাশে, ডাক বাংলো চত্বর, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও আশেপাশের চায়ের দোকানে তারা অভিজিৎকে দেখছেন। তারাও মনে করেন, অভিজিৎ মানসিক ভারসাম্যহীন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক রোগীর স্বজন রবিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত রাতে বৃষ্টি শুরু হলে ওই যুবক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশ্রয় নেন। এরপর দ্বিতীয়তলায় গিয়ে খাবার খুঁজতে শুরু করলে রোগীর স্বজনরা তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন।'
'আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আবারও ওই যুবক হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় উঠলে ইস্রাফিল নামে এক ব্যক্তি ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন ওই যুবককে মারধর শুরু করে। তারা দাবি করেন, ওই যুবক বাচ্চা চুরি করতে এসেছেন,' বলেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্মীরা আরও জানান, মারতে মারতে ওই যুবককে হাসপাতালের নিচে নিয়ে এলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে বসে থাকা ২০-২৫ জন যুবক তাকে ডাক বাংলোর সামনের একটি গাছে বেঁধে মারধর শুরু করেন। মরধরের পাশাপাশি তারা ওই যুবকের শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা ও পরে থাকা লুঙ্গিতে আগুন ধরিয়ে দেন।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুয়েল মিয়া জানিয়েছেন, প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এই ঘটনা চললেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানাকে অবহিত করেনি।
ওই যুবককে উদ্ধার করেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) চম্পক বড়ুয়া। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হচ্ছে।'
'প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওই যুবককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা কয়েকজন যুবককে থানায় এনেছি,' বলেন চম্পক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালে দায়িত্বরত ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) ডা. আবিদুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি কেউ আমাদের জানায়নি।'
যোগাযোগ করা হলে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব ছিল তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা। এমনকি আমাকেও বিষয়টি জানানো হয়নি।'
'খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবো, আমাদের কারও গাফিলতি থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে,' বলেন তিনি।
Comments