নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আধিপত্যের দ্বন্দ্বে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে জোড়া খুন

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজন নিহত হয়েছেন। শনিবার রাতে উপজেলার বন্দর রেললাইন ও পাশের শাহী মসজিদ এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড দুটি ঘটে।

নিহতরা হলেন হাফেজীবাগ এলাকার রাজমিস্ত্রি আব্দুল কুদ্দুস (৭০) এবং শাহী মসজিদ এলাকার বাসিন্দা ও বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (৪২)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক দুই কাউন্সিলর হান্নান সরকার ও আবুল কাউসার আশার অনুসারীদের মধ্যে মাদক ব্যবসা, ইজিবাইক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি ও এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে গত শুক্র ও শনিবার দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় বন্দর রেললাইন এলাকায় প্রতিপক্ষের লোকজন আব্দুল কুদ্দুসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তার ছেলে পারভেজ প্রতিপক্ষের গ্রুপের হলেও ঘটনার সময় তাকে খুঁজে না পেয়ে তার বাবা আব্দুল কুদ্দুসের ওপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।

কুদ্দুসের ছোট ভাই দুদু মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ভাইকে চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পারভেজের কথা জিজ্ঞেস করে। না পেয়ে ভাইকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। ভাই বারবার বলছিল, 'আমারে জানে মাইরো না'। কিন্তু ওরা শোনেনি।'

গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। তার স্বজনেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যেই রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রতিপক্ষের লোকজন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মেহেদী হাসানকে তার বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় সিরাজউদ্দোল্লা ক্লাবের সামনে তাকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এতে মেহেদীর মৃত্যু হয়।

মেহেদীর স্বজন মাহফুজুল হক সৌরভ বলেন, 'প্রথম খুনের সময় মেহেদী বাড়িতেই ছিল। প্রতিপক্ষের লোকজন রাস্তায় তাকে পেয়ে তুলে নিয়ে যায় এবং ক্লাবের ভেতর পিটিয়ে মেরে ফেলে। তার মুখ ও বুক থেঁতলে দিয়েছে।'

এই ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা এলাকাছাড়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টহল দেয় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ইজিবাইক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য (বহিষ্কৃত) হান্নান সরকার এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবুল কাউসার আশার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকমাস ধরেই দ্বন্দ্ব চলছিল। ওই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে গত দুই দিনে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আবুল কাউসার আশা দাবি করেন, নিহত মেহেদী ও অভিযুক্ত রনি দুজনই একসময় তার ঘনিষ্ঠ কর্মী ছিল। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে মাদক ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। তিনি বলেন, 'এটি রাজনৈতিক কোনো বিষয় নয়। স্থানীয় দ্বন্দ্বে রাজনৈতিক কারণে আমাকে জড়ানো হচ্ছে।'

তবে অভিযুক্ত অপর পক্ষের নেতা হান্নান সরকারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জানিয়েছেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। রাতেই র‍্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'এই ঘটনায় যারা সরাসরি জড়িত এবং যারা নেপথ্যে আছে, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।'

এ ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Comments

The Daily Star  | English

Iran's top security body to decide on Hormuz closure

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

13h ago