কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ইউএনওর সই জালিয়াতির অভিযোগ, জামায়াতের পদ থেকে অব্যাহতি

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা মডেল কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সই স্ক্যান করে ফাইল জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও স্থানীয় জামায়াত নেতা হাছেন আলীর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ প্রমাণ হলে এটি হবে 'সরকারি নথিতে জালিয়াতির' একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ।
ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন হাছেন আলীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে এবং বৃহস্পতিবার রাতে জামায়াতে ইসলামীর লালমনিরহাট জেলা কমিটি তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ মে হাছেন আলীকে হাতীবান্ধা মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও শামীম মিয়া। এরপর হাছেন আলী চুপিসারে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য ১৩টি ফাইল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) পাঠান, যেখানে ইউএনওর সই স্ক্যান করে বসানো হয়।
এ বিষয়ে ইউএনও শামীম মিয়া বলেন, 'আমি ওই নিয়োগ ফাইলে সই করিনি। আমার অনুমতি ছাড়াই আমার সই স্ক্যান করে ব্যবহার করা হয়েছে, যা প্রতারণা ও জালিয়াতি। এজন্য কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাছেন আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি আমি নিজে তদন্ত করছি এবং প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিষয়টি ইউএনওকে জানানো হলে ঘটনাটি সামনে আসে।
হাছেন আলীর বিরুদ্ধে শুধু নিয়োগ ফাইলে সই জালিয়াতিই নয়, আরও কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কলেজের জমিদাতা ও একজন নারী শিক্ষকের অভিযোগ, তাদের হেনস্থা ও মারধর করেছেন হাছেন আলী এবং তার অনুসারীরা।
কলেজের জমিদাতা জবের আলী বলেন, '২০১২ সালে আমরা ভাইয়েরা মিলে এই কলেজের জন্য জমি দিই। কিন্তু গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজে আমাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। ২৩ ফেব্রুয়ারি অডিট টিমের সামনে আমাদের অপমান করেন হাছেন আলী ও তার লোকজন। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।'
কলেজের নারী শিক্ষক ছালমা বেগম জানান, তিনি ২০১৯ সালে নিয়মিত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান এবং তখন থেকেই দায়িত্ব পালন করছিলেন।
'গত জানুয়ারি মাস থেকে হাছেন আলী নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করতে থাকেন। ১৩ মার্চ তিনি ও তার লোকজন আমাকে অফিস কক্ষ থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন', বলেন তিনি।
ওই শিক্ষক আরও জানান, ইউএনওর কাছে ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে হাছেন আলী বলেন, 'বিষয়টি তদন্তাধীন। এ নিয়ে আমি এখনই কোনো মন্তব্য করব না।'
জেলা জামায়াত আমির আবু তাহের বলেন, 'স্পষ্ট কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাছেন আলীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।'
'হাতীবান্ধা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর জরুরি সভায় হাছেন আলীকে উপজেলা আমিরের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে রফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে', বলেন তিনি।
Comments