তারাগঞ্জে পিটিয়ে হত্যা: সামনে এলো নতুন ভিডিও, ৮ পুলিশ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত

ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

রংপুরের তারাগঞ্জে ভ্যানচোর সন্দেহে রূপলাল রবিদাস ও প্রদীপ লাল রবিদাসকে পিটিয়ে হত্যার সময়ের একটি নতুন ভিডিও সামনে এসেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচ মিনিট ২১ সেকেন্ডের ওই ভিডিও দেখে দোষীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

এছাড়া, দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে পুলিশের দুই উপপরিদর্শক (এসআই) ও ছয় কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বুধবার বিকেলে রংপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) আবু সাইম তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন—তারাগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জোবায়ের ও সফিকুল ইসলাম এবং কনস্টেবল ফারিকুদ আখতার জামান, ধিরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবির, মোক্তার হোসেন ও বাবুল চন্দ্র রায়।

তারাগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলামকে মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট স্কুল মাঠে ভ্যানের ওপর দুজন। তখনো তারা জীবিত, রক্তাক্ত শরীর। ভ্যান ঘিরে শতাধিক মানুষ, তারা মোবাইল ফোনে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে রেখেছেন। সেই আলোতেই ভিডিও করা হয়েছে।

প্রথম সারিতে ছিলেন যুবকরা। ভ্যানের ঠিক পাশেই পুলিশের কয়েকজন সদস্য, তারা বাঁশি বাজিয়ে ভিড় সরানোর চেষ্টা করছিলেন।

রূপলাল ওঠার চেষ্টা করেন, তবে ব্যর্থ হয়ে শুয়ে পড়েন। পুলিশের উপস্থিতিতেই দুইজনের ওপর চলে ক্রমাগত হামলা চলে। এক পর্যায়ে পুলিশ ভিড় ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর উপস্থিত জনতাকে আরও বেশি হিংস্র হয়ে ওঠতে দেখা যায় ভিডিওতে।

এতে আরও দেখা যায়, মারধরের এক পর্যায়ে রূপলাল ও প্রদীপ ভ্যান থেকে মাটিতে পড়ে যান। সে সময় ভ্যানটি তাদের শরীরের ওপর উল্টে ফেলা হয়।

একজনকে বলতে শোনা যায়, ভ্যানের ওপর চড়, চাপা দিয়ে মেরে ফেল। অন্য একজন বলেন, ছুরি নিয়ে আয়, জবাই করে মেরে ফেল। পরে কয়েকজন যুবক ভ্যান সরিয়ে আবারও দুজনকে কিল-ঘুষি, লাথি মারেন এবং লাঠি ও রড দিয়েও মারতে দেখা যায়।

ভিডিওতে কালো রঙের টি-শার্ট পরা এক যুবকের চেহারা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। এছাড়া, লাল, হলুদ, আকাশি ও ছাই রঙা টি-শার্ট পরা কয়েকজন যুবককে হিংস্রভাবে মারধর করতে দেখা গেছে।

ভিডিওটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষে তাদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ২০-২৫ জন যুবক মারধরের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

রূপলালের স্ত্রী মালতি রানী রবিদাস রোববার দুপুরে তারাগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ৭০০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। সেই রাতেই পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে বুড়িরহাট এলাকা।

সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে মঙ্গলবার রাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা পথসভা করেন। জানতে চাইলে তারাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান শিপু বলেন, 'যারা মারধরের সঙ্গে জড়িত, তারাই অপরাধী। ২০-২৫ জন এ ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন। অনেকেই বাঁচাতে গিয়েছিলেন, তারা দোষী নয়। পুলিশ এসে বাঁচাতে পারেনি, বরং পালিয়ে গেছে। গ্রামবাসীরা দোষী হলে পুলিশও দোষী। ৭০০ জনের নামে মামলা দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে টাকা নেওয়ার সুযোগ আমরা দেবো না।'

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, 'ঘটনাস্থলে হাজার হাজার মানুষ ছিল, আর পুলিশ ছিল কয়েকজন। পুলিশ দুইজনকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পেছন থেকে ধাক্কাধাক্কি ও হামলার মুখে পুলিশকে সরে যেতে হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'ফেসবুকে পাওয়া নতুন ভিডিও দেখে দোষীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। অনেককে শনাক্ত করা হয়েছে, তারা পলাতক। নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না, প্রমাণের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

CMP chief orders police to open fire if faced with weapons

The verbal directive, issued over wireless on Tuesday night, applies to all CMP personnel

2h ago