চট্টগ্রাম-১২

ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহ দিতে প্রার্থীদের মনোযোগ

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ সাতটি দলের মোট আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে স্থানীয়দের মতে, ভোটের লড়াই হবে মূলত আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে।
চট্টগ্রাম-১২ আসনের অন্তর্ভুক্ত পটিয়ায় ব্যান্ড দল ভাড়া করে নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রচারণার ছবিটি বুধবার এয়াকুব দণ্ডী গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: রাজীব রায়হান

চট্টগ্রামের পটিয়ায় ধলঘাট ক্যাম্প এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব মো. ইব্রাহিম। পেশায় একজন কৃষক ইব্রাহিম বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রায় সব জাতীয় নির্বাচন দেখেছেন। এবারের নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চাইলে ইব্রাহিম বলেন, নির্বাচন এখন আর সাধারণ মানুষের জন্য উৎসবের উপলক্ষ নয়, বরং শঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইব্রাহিম বলেন, 'প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মীরা যখন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, তখন এলাকার সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এই ধরনের সহিংসতা নির্বাচনের আমেজকে নষ্ট করে।'

স্থানীয়দের মতে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এই আসনে নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

ভাটিখাইন ইউনিয়নের রিকশাচালক আব্দুল নবী বলেন, ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে এবার তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের তাদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ সাতটি দলের মোট আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে স্থানীয়দের মতে, ভোটের লড়াই হবে মূলত আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে।

আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তিনি 'ঈগল' প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বুধবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ইউনিয়নে উভয় প্রার্থীর পক্ষ থেকে নির্বাচনী ক্যাম্প বসানো হয়েছে। কয়েকটি ইউনিয়নে জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) সহ আরও কয়েকজন প্রার্থীর ক্যাম্প দেখা যায়।

তবে পটিয়া পৌরসভা এলাকায় প্রায় সব প্রার্থীর পোস্টার ও ব্যানার দেখা গেছে।

জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে কাঠমিস্ত্রি সুমন নাথ বলেন, এলাকার অধিকাংশ মানুষ শান্তিপ্রিয়। তারা সহিংসতা পছন্দ করে না। তারা চান নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক।

মোতাহেরুল বুধবার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণা চালান এবং একই দিনে সামশুল খরনা ইউনিয়নে প্রচারণা চালান। আওয়ামী লীগের পটিয়া উপজেলা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিটের নেতাকর্মীরা মোতাহেরুলের প্রচারণায় এবং সামশুলকে তার নিজ কর্মীদের সঙ্গে প্রচারণায় দেখা যায়।

সামশুল ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে টানা তিনবার এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ভোটারদের মধ্যে বিগত ১৫ বছরে তার সময়ে বাস্তবায়িত হওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন।

সামশুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মোতাহেরুলের লোকজন বিভিন্ন এলাকায় তার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে এবং ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, 'মোতাহেরুল যেকোনো মূল্যে বিজয়ী হতে চান। তাই তিনি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। তিনি জানেন ভোটাররা আমার পক্ষে নীরব ভোট বিপ্লবের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তাই ভোট কেন্দ্রে আসা নিরুৎসাহিত করতে তিনি এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন।'

অভিযোগ অস্বীকার করে মোতাহেরুল বলেন, 'সামশুল জানেন ভোটাররা এবার তাকে প্রত্যাখ্যান করবেন। তাই তিনি আমাকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।'

তিনি বলেন, 'সামশুল দলীয় মনোনয়ন পেয়ে তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এবার আমি নৌকা প্রতীক পেয়েছি, তাই ভোটাররা আমাকে ভোট দেবেন।'

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৯ হাজার ৪৩৩ জন, এর মধ্যে নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ২০৪।

ছনহরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও আলমদার পাড়ায় মোতাহেরুলের নির্বাচনী ক্যাম্পের ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন বলেন, নারী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

তিনি বলেন, 'এখানে অনেক ভোটারই রক্ষণশীল পরিবারের। আমরা ভোটারদের উত্সাহী করতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।'

এ আসনে (পটিয়া) ১৯৭৩, ১৯৮৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পাঁচবার জয়লাভ করেন এবং ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬ (ফেব্রুয়ারি), ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরাও পাঁচবার জয়লাভ করেন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী।

Comments

The Daily Star  | English
pharmaceutical industry of Bangladesh

Pharma Sector: From nowhere to a lifesaver

The year 1982 was a watershed in the history of the pharmaceutical industry of Bangladesh as the government stepped in to lay the foundation for its stellar growth in the subsequent decades.

17h ago