লালমনিরহাট-পাবনা-ফরিদপুরে পাঁচ আসনের ফল প্রত্যাখ্যান, পুনর্নিবাচনের দাবি

এসব আসনে ভোট কারচুপি, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, ব্যালট ছিনতাই ও জাল ভোটের অভিযোগ এনেছেন পরাজিত স্বতন্ত্র ও জাপা প্রার্থীরা।
ফল প্রত্যাখ্যান
ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেন ফরিদপুর-২ আসনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটের তিনটি আসনে, পাবনার দুটি আসনে এবং ফরিদপুরের একটি আসনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে এসব আসনে নতুন করে ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন কয়েকজন প্রার্থী।

লালমনিরহাট-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান প্রধান ১৮টি কেন্দ্রের ফল স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন। লালমনিরহাট-২ ও লালমনিরহাট-৩ আসনের দুই স্বতন্ত্র ও দুই জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। 

এ তিন আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

পাবনা-৩ আসনের ভাঙ্গুরা ও ফরিদপুর উপজেলার ৮৯টি কেন্দ্রের সবকয়টিতে এবং চাটমোহর উপজেলার ৬টি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ এনে এসব কেন্দ্রে নতুন করে ভোটের দাবি করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হামিদ মাস্টার। 

অন্যদিকে, পাবনা-১ আসনে ২৫ কেন্দ্রের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে ভোটের দাবি করে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আবু সাইয়িদ।

এদিকে, ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়া নির্বাচনে কারচুপি ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এ আসনের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নতুন করে ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

লালমনিরহাট

লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমানের অভিযোগ, ভোটের দিন নৌকা প্রার্থীর লোকজন তাকে ও তার লোকজনকে অবরুদ্ধ করে ১৮টি কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেয়।

'নির্বাচন চলাকালে প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ছিল' জানিয়ে তিনি বলেন, '১৮টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছ।'

এ আসনে ৯০ হাজার ৩৪ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোতাহার হোসেন। আতাউর রহমান প্রধান পেয়েছেন ৭৪ হাজার ১৫৮ ভোট।

লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হকের অভিযোগ, নৌকা প্রার্থীর লোকজন প্রশাসন, প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের ম্যানেজ করে জাল ভোট দিয়েছেন। 

তিনি প্রশাসনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও প্রতিকার পাননি বলে দাবি করেন।

একই আসনের জাপা প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের অভিযোগ, নৌকা প্রার্থীর লোকজন ভোটকেন্দ্রে অবাধ বিচরণ করে ও জাল ভোট দেয়। প্রশাসনের ভূমিকা ছিল নিষ্ক্রিয়। 

এ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তিনি ভোট পেয়েছেন ৯৭ হাজার ৪৩৪। স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল হক পেয়েছেন ৫১ হাজার ৩৩৮ ভোট। জাপা প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পেয়েছেন ১ হাজার ১৭৩ ভোট।

লালমনিরহাট-৩ আসনে জাপা প্রার্থী জাহিদ হাসানের অভিযোগ, বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা প্রকাশ্যে জাল ভোট দিয়েছেন। প্রশাসনের লোকজন ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। 

এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাবেদ হোসেনও ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন।

এ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মতিয়ার রহমান। তিনি ভোট পেয়েছেন ৭৬ হাজার ৩৩৮। স্বতন্ত্র প্রার্থী জাবেদ হোসেন বক্কর পেয়েছেন ১২ হাজার ৯৯৭ এবং জাপা প্রার্থী জাহিদ হাসান পেয়েছেন ১০ হাজার ৪৬১ ভোট।

এসব অভিযোগের বিষয়ে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আলমগীর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি যতগুলো কেন্দ্রে ঘুরেছি, সবখানেই ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ পেয়েছি। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় ছিল।'

পাবনা

আজ মঙ্গলবার পাবনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মাস্টার বলেন, 'ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় ভোটকেন্দ্র থেকে নৌকার প্রার্থীর ছেলে ও তাদের সমর্থকরা আমার এজেন্টদের জোর করে বের করে পরে জাল ভোট দিয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসারদের সহযোগিতায় এসব অনিয়ম করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ব্যালট পেপার নিয়ে জোর করে সিল মেরেছে নৌকার লোকজন। এছাড়া ব্যালটের মুড়ি বই অংশ পরীক্ষা করলে দেখা গেছে সেখানে ভোটারদের কোনো নম্বর বা স্বাক্ষর নেই।'

এসব অভিযোগের বিষয়ে আগামীকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে বলে জানান আব্দুল হামিদ। 

পাবনা-১ আসনের  ২৫ কেন্দ্রের ফলাফল প্রত্যাখ্যান নতুন করে ভোটের দাবি করেছেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। এ দাবিতে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া চিঠিতে তিনি বলেন, 'এ আসনের ১২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৫টি ভোটকেন্দ্রে সরাসরি অনিয়ম হয়েছে। নৌকার প্রার্থী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল ও ভোট কেটে সরাসরি ব্যালট বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এসব কেন্দ্রের ব্যালট পেপারের মুড়িবই পরীক্ষা করলেই এর সত্যতা প্রমাণিত হবে।'

অভিযোগে তিনি নির্দিষ্ট করে ওই ২৫টি ভোটকেন্দ্রের উল্লেখ করেছেন।

বেসরকারি ফলাফলে এ আসনে নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকু ৯৪ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ পেয়েছেন ৭২ হাজার ৩৮৭ ভোট।

ফরিদপুর

ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসনে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'নির্বাচনে আমাকে জোর করে হারানো হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকার মোট ১১৫টি কেন্দ্রের মধ্যে গট্টি ইউনিয়ন, যদুনন্দী, রামনগর, কাইচাইল ইউনিয়নের ভোট জোর করে নৌকা প্রতীকে কেটে নিয়েছে নৌকার সন্ত্রাসীরা।'

এ আসনের ২০টি কেন্দ্র থেকে তার পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

'প্রহসনের নির্বাচন, কারচুপির নির্বাচন ও ব্যালট ছিনতাইয়ের নির্বাচন নগরকান্দা, সালথাবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে। এই ফলাফল আমরা মানি না,' বলেন তিনি।

Comments