মানিকগঞ্জে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানপ্রার্থীকে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ

মানিকগঞ্জে জেলা পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানপ্রার্থী কেএম বজলুল হক রিপন অভিযোগ করেছেন, ‘সরকার দলীয় সন্ত্রাসী’দের ভয়ে তিনি মানিকগঞ্জ ছাড়া হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ও তার মনোনয়নের প্রস্তাবক ও সমর্থক আত্মগোপনে আছেন।
কেএম বজলুল হক রিপন। ছবি: সংগৃহীত

মানিকগঞ্জে জেলা পরিষদের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানপ্রার্থী কেএম বজলুল হক রিপন অভিযোগ করেছেন, 'সরকার দলীয় সন্ত্রাসী'দের ভয়ে তিনি মানিকগঞ্জ ছাড়া হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ও তার মনোনয়নের প্রস্তাবক ও সমর্থক আত্মগোপনে আছেন।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে বজলুল হক রিপন জানান, নির্বাচন থেকে সরে যেতে তাকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগপত্রের অনুলিপি তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার, কমিশনের সচিব ও মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছেও পাঠিয়েছেন।

কেএম বজলুল হক রিপন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন ব্যক্তি। আমি মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমার প্রতিপক্ষের লোক আমাকে এবং আমার প্রস্তাবক ও সমর্থককে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগসহ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।'

'গত ১৮ সেপ্টেম্বর রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মনোনয়নপত্র বাছাই কাজ শেষে সেখান থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রতিপক্ষের কতিপয় ব্যক্তিরা আমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। কখন মনোনয়ন প্রত্যাহার করব, এ ব্যাপারে প্রচণ্ড চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমি সেখান থেকে কোনোভাবে আমার নিজ বাসভবনে চলে যাই। বাসায় আসার পর আনুমানিক বিকেল ৫টার সময় অতর্কিতভাবে আমার বাড়িতে ৩০-৩৫টি মোটর-সাইকেল যোগে ৪০-৫০ জন প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী বাহিনী উপস্থিত হয় এবং আমার লোকজনদেরকে প্রচণ্ড ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সে সময় আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। সেখান থেকে নিরাপদ অবস্থানে চলে যাই এবং মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসারকে অবহিত করি। ওই দিন রাতেই আমি প্রাণভয়ে ঢাকায় চলে আসি', বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'গত সোমবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে আমার মনোনয়ন দাখিলের প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। কিন্তু তারা কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তাদেরকে ধরতে না পেরে তাদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি-ধামকি, প্রাণনাশের হুমকি ও গালিগালাজ করতে থাকে। তাদের কাছ থেকে আমি মোবাইল ফোনে জেনে মানিকগঞ্জ সদর থানা ও সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহিত করি এবং তাদের কাছে নিরাপত্তা চাই। হামলাকারীরা রাত ৩টা পর্যন্ত তাদের ২ জনের বাড়ির সবাইকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং ভোররাতে চলে যায়। এখন পর্যন্ত আমি ও আমার প্রস্তাবকারী, সমর্থনকারীসহ প্রাণভয়ে মানিকগঞ্জ ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি, আমার প্রতিপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে আমাকে আমার নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। বিভিন্নভাবে তিনি তার লোকদের দ্বারা আমার প্রচারণায় বাধা, প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। বর্তমানে আমি আমার বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, কন্যা, আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের ভয়ে মানিকগঞ্জ ছাড়া। সরকারের কাছে আমি আমার প্রস্তাবক, সমর্থক, পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা চাই।'

এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এসব বিষয় মূলত পুলিশ সুপার দেখবেন। আমি তার সঙ্গে কথা বলব।'

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এখনো এসব বিষয়ে জানি না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'

মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রশাসক, আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বা আমার লোকজনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, পুরোটাই মিথ্যা। আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি। গত নির্বাচনেও আমার বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থী ছিলেন। আমি তাদের পরাজিত করেই চেয়ারম্যান হয়েছিলাম। এবারও দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি ভোটারদের কাছে কাছে ঘুরছি। ভোট প্রার্থনা করছি। ভোটাররা আমাকে ভোট দিলে জিতব। না দিলে হারব। আমি তাই মেনে নেব। আমি কখনো সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেই নাই। আমার নাম বলে কেউ কিছু করলে তার দায়িত্ব সে-ই নিবে।'

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জজকোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম বলেন, 'আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনমুখী দল। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ অপকর্ম করলে তার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগ এ দায় নেবে না।'

মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবার মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বজলুল হক খান রিপন।

কেএম বজলুল হক রিপন গত জেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন। তিনি পেয়েছিলেন ৫০ ভোট। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম মহীউদ্দীন ৪৭৬ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রমজান আলী পেয়েছিলেন ৩৫৭ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য মফিজুল ইসলাম খান কামাল পেয়েছিলেন ২ ভোট এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রফিক পেয়েছিলেন ১ ভোট। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হচ্ছেন ২ জন।

সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী ১৭ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলাসহ দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মানিকগঞ্জের ৬৫টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৭টি উপজেলা পরিষদ ও ২টি পৌরসভার নির্বাচিত ৮৮৯ জন জনপ্রতিনিধি ভোটের মাধ্যমে ১ জন চেয়ারম্যান, ৭টি সাধারণ আসনে ৭ জন সদস্য ও ৩টি সংরক্ষিত আসনে ৩ জন সদস্য নির্বাচিত করবেন। চেয়ারম্যান পদে ২ জন, সাধারণ আসনে ২২ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীটা করছেন।'

Comments