ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২

যে কারণে উপনির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেন আ. লীগের ৩ নেতা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের ৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী।
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা আওয়ামী লীগের মঈন উদ্দিন মঈন, মাহবুবুল বারী চৌধুরী ও অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু (বাম দিক থেকে)। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের ৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল শুক্রবার জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এসব প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান। ইতোমধ্যে আজ শনিবার দুপুরের মধ্যে ৩ জন আওয়ামী লীগ নেতা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগের ৩ নেতা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিলেন। তাই ওয়ার্ড থেকে জেলা আওয়ামী লীগ পর্যন্ত দলীয় বিভক্তি তৈরি হচ্ছিল। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়। এরপর তারা নিজ দায়িত্বে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াকে জয়ী করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলের মধ্যে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।'

প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা আওয়ামী লীগ নেতারা- জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন, একই কমিটির আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু।

এই ৩ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় ভোটের লড়াইয়ে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া ছাড়া থাকছেন জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি দেওয়া এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদ এবং জাকের পার্টি মনোনীত জহিরুল ইসলাম জুয়েল।

জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জয়ী হওয়া উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া পদত্যাগ করার পর জাতীয় সংসদের স্পিকার এ আসনটিকে শূন্য ঘোষণা করেন। পরে তিনি আবার দল ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে এই আসনে আওয়ামী লীগ তাদের দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত ঘোষণা করে।

উন্মুক্ত ঘোষণার সুযোগে সরাইল ও আশুগঞ্জ এই ২ উপজেলা থেকে মোট ৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম জমা দেন। এর মধ্যে বাছাইয়ে সরাইল উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফ উদ্দিন মন্তুর প্রার্থিতা বাতিল হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, 'আমরা চেয়েছি ৩ জন প্রার্থী একসঙ্গে যেন তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।'

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগ নেতা মঈন উদ্দিন মঈন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপনির্বাচনের কয়েকদিন পরেই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এই কম সময়ের মধ্যে জনগণের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। ফলে, আমি পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তাই শনিবার সকাল ১১টার দিকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছি।'

প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা শাহজাহান আলম সাজু বলেন, 'আমার ওপর কোনো চাপ নেই। আমি নিজে থেকেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।'

আরেক প্রার্থী মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেন, 'মাত্র এক বছরেরও কম মেয়াদের ভাঙা নির্বাচন। তাছাড়া আমার স্বাস্থ্য ভালো নেই। এজন্য আমি এবারের নির্বাচন করছি না।'

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই আসনের উপনির্বাচনের জন্য প্রথমে ১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এরপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই একজন প্রার্থী মারা যান এবং যাচাই-বাছাইয়ের দিন আরও ৪ জন বাদ পড়েন। ফলে, বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৮ জন। কিন্তু, আওয়ামী লীগের ৩ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় এখন পর্যন্ত আছেন ৫ জন।

Comments